হোমিওপ্যাথির নীতিমালার সংজ্ঞা [দ্বিতীয় অধ্যায়]

ইংরেজি HOMOEOPATHY শব্দটি গ্রিক শব্দ Homoeo রা Homoeoios এবং pathy বা pathos হইতে উৎপন্ন হইয়াছে। গ্রিক ভাষায় হোমিও মানে সদৃশ, like,similarএবং pathos মানে উপায়, পদ্ধতি বা কষ্টভোগ Means, Method or Suffering। অভিধানিক অর্থে হোমিওপ্যাথি অর্থ হইল সদৃশ রোগ বা সদৃশ দুর্ভোগ।

রোগ নিরাময়ের প্রাকৃতিক নিয়ম Simila Similibus Curantur এর বাক্যগত অর্থ Let like be cured by like অর্থাৎ সদৃশ রোগ সৃজনক্ষম ঔষধ দিয়াই রোগ আরোগ্য সম্ভব। হোমিওপ্যাথি একটি সুসংগঠিত নিয়মতান্ত্রিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং আরোগ্য কলা। যে চিকিৎসা বিজ্ঞানের মূল সূত্র হইতেছে সুস্থবস্থয় কোন ঔষধ স্থুল মাত্রায় সেবন করিলে মানুষের দেহ ও মনে যে সকল অসুস্থকর লক্ষন প্রকাশ পায়, ঐ প্রকার লক্ষনযুক্ত প্রাকৃতিক অসুস্থতায় উক্ত ঔষধের শক্তিকৃত সূক্ষ্মমাত্রা প্রয়োগে লক্ষণসমূহ অন্তর্হিত হয়।

হোমিওপ্যাথির সংজ্ঞায় বলা যায় “প্রাকৃতিক রোগের দ্বারা সৃষ্ট মানব শরীরের বিকৃত লক্ষণসমষ্টি দ্বারা অংকিত প্রতিচ্ছবির ন্যায় সুস্থ দেহে পরীক্ষিত অনুরুপ প্রতিচ্ছবি সৃষ্টি করিতে সক্ষম শক্তিকৃত ঔষধের একবার একটিমাত্র ঔষধ প্রয়োগ ব্যবস্থাকে হোমিওপ্যাথি বলে।

হোমিওপ্যাথির উপর মনীষীদের বিভিন্ন সংজ্ঞাঃ
♦ডা: বোরিকের মতে সদৃশ লক্ষণ ভিত্তিক আরোগ্য পদ্ধতিকে হোমিওপ্যাথি বলে।
♦ডা: এলেনের মতে হোমিওপ্যাথি সদৃশ বিধানভিত্তিক একটি নিয়নভিত্তিক চিকিৎসা।
♦ডাঃ এ, ডাইট স্মিথ বলেন, হোমিওপ্যাথি একটি বিশেষ আরোগ্য বিজ্ঞান।
♦ডাঃ স্যামুয়েল ফ্রেডারিক হ্যানিম্যান যাহার বিকাশ সাধন করেছেন এবং যা আরোগ্যের বৈজ্ঞানিক ও প্রাকৃতিক নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত।
♦ডাঃ হাবাট এ. রবার্টস এর মতে আরোগ্যের যে বিজ্ঞান ও কলা প্রকৃতির মৌলিক নিয়ম নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত, তাকেই হোমিওপ্যাথি বলে।

চিকিৎসার গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করিবার পূর্বে চিকিৎসকের কি কি বিষয়ে গুণ ও জ্ঞান থাকিতে হইবে তাহা নিম্নে আলোচিত হইলঃ
১. রোগ সম্বন্ধে জ্ঞান।
২. ঔষধের আরোগ্যকারী শক্তি সম্বন্ধে জ্ঞান।
৩. ঔষধ প্রয়োগ সম্পর্কিত জ্ঞান।
৪. আরোগ্যের বিঘ্ন দূর করার জ্ঞান।
৫. রোগের গতিধারা, অবস্থা, পরিণতি সম্পর্কিত জ্ঞান।
৬. মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের অবস্থান, তাহাদের ক্রিয়া ও পরস্পরের সম্পর্কে জ্ঞান।

আদর্শ আরোগ্য বলিতে কি বুঝ?
হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান বলেছেন- “আরোগ্যের সবচেয়ে উত্তম আদর্শ হচ্ছে – “সহজবোধ্য ও সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতির উপর ভিত্তি করে সবচেয়ে নির্ভ রযোগ্য উপায়ে, রোগীর ক্ষতি না করে দ্রুত, মৃদু, ও স্থায়ীভাবে রোগের সম্পূর্ণ অপসারণের মাধ্যমে রোগীকে পুনরায় সুস্থাবস্থায় ফিরিয়ে আনা”

১. আরোগ্য হচ্ছে স্বাস্থ্যে প্রত্যাবর্তন যেখানে আক্রান্ত অঙ্গের লক্ষণসমূহই কেবল দূরীভূত হয়না বরং রোগী শারীরিক, মানসিকভাবে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ বোধ করে।
২. আরোগ্য কোন অস্থায়ী ব্যবস্থা নয়; বরং স্থায়ী।
৩. আরোগ্য তাকেই বলে যা মৃদুভাবে সম্পন্ন হয় – রোগীকে কোন প্রকার কষ্ট না দিয়ে বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে।
৪. সহজবোধ্য ও চিরন্তন নীতি বা নিয়মের উপর ভিত্তি করেই আরোগ্য সাধিত হয়।

রোগ সম্বন্ধে হোমিও মতবাদ (Conception of disease from the Homeopathic point of view)

রোগ বলতে কি বুঝায় বা রোগ সম্পর্কে হোমিওপ্যাথিতে কিরূপ ধারনা পোষণ করা হয় ?

জীবনীশক্তির বিকৃত অবস্থাজনিত সৃষ্ট লক্ষণকেই রোগ বলা হয়। অদৃশ্য জীবনীশক্তি মানবদেহে অতি সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থিত। জীবনীশক্তির এই গতি ভিতর হইতে বাহিরের দিকে। কোন ব্যক্তি পীড়িত হইলে আমাদের প্রথম বুঝিতে হইবে জীবনীশক্তির বিপর্যস্ত অবস্থা। রোগশক্তির বিরুদ্ধে সব সময় জীবনীশক্তি যুদ্ধ করিয়া আসিতেছে এবং রোগশক্তিকে প্রতিহত করিয়া জীবন ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখিতেছে। যদি রোগশক্তিটি জীবনীশক্তি অপেক্ষা শক্তিশালী হয় তবে জীবনীশক্তির সুশৃংঙ্খল কর্মকান্ডে বিপর্যয় ঘটিলে সঙ্গে সঙ্গে বাহিরে জানাইয়া দেয়।

প্রাকৃতিক রোগশক্তি সূক্ষ্ম ও অজড়। এই অজড় রোগশক্তির প্রভাবেই অজড় জীবনীশক্তি বিকৃতাবস্থা প্রাপ্ত হইয়া দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে লক্ষণ সমষ্টির সাহায্যে বিশৃঙ্খল অবস্থা প্রকাশ করে। যাহার ফলে মানবের দেহ ও মনের বিকৃত অবস্থা প্রাপ্ত হয়। অনুভূতির বিকৃতি ঘটে ও বিশৃঙ্খল ক্রিয়াকলাপ দেখা দেয়। এই সকল বিকৃত অনুভূতি, বিশৃঙ্খল ক্রিয়াকলাপ অর্থাৎ জীবনীশক্তির বিকৃত অবস্থাজনিত যে সকল লক্ষণ মানবদেহে প্রকাশিত হয় ঐ লক্ষণসমষ্টিকেই হোমিওপ্যাথি রোগ বলা হয়। রোগ সম্পর্কে হোমিওপ্যাথিতে যে ধারণা পোষণ করা হয় তাহা হইল এই যে প্রাকৃতিক রোগ শক্তি সূক্ষ ও অজড়।

লক্ষণ কত প্রকার ও কি কি ?
ব্যক্তিনিষ্ঠ লক্ষণঃ Subjective Symptoms- রোগের যে সকল লক্ষণ শুধুমাএ রোগী স্বয়ং অনুভব করিতে পারেন এবং রোগী না বলিলে চিকিৎসক বা অন্য কেহ তাহা বুঝিতে পারে না উহাদিগকে ব্যক্তিনিষ্ঠ লক্ষণ বলে। যেমন- পিপাসা, মাথাব্যথা, ক্ষুধা, ব্যথা বেদনা প্রভৃতি।
বস্তুনিষ্ঠ লক্ষণঃ Objective Symptoms- রোগের যে সকল লক্ষণ রোগী নিজে না বলিলেও চিকিৎসক তাহার জ্ঞান ইন্দ্রিয়ের দ্বারা ও যান্ত্রিক পরীক্ষার দ্বারা, পার্শ্ববর্তী লোকজন প্রত্যক্ষ করেন উহাদিগকে বস্তুনিষ্ঠ লক্ষণ বলে। যেমন- জ্বর, প্রলাপ, পক্ষাঘাত, কাশি প্রভৃতি।
পূর্ণাঙ্গ রোগ লক্ষণ কাহাকে বলে ?
যে লক্ষণের অবস্থান, অনুভূতি, হ্রাসবৃদ্ধি ও আনুষাঙ্গিক অবস্থা আছে জ্ঞান ইন্দ্রিয় দ্বারা সহজেই বোধগম্য হয় তাহাকে পূণাঙ্গ রোগ লক্ষণ বলে।
প্রকৃত রোগ লক্ষণের বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি ?
প্রকৃত রোগ লক্ষণ রোগীর স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের বিকৃত অবস্থা প্রকাশ করে।
প্রকৃত রোগ লক্ষণ জ্ঞান ইন্দ্রিয় দ্বারা সহজেই বোধগম্য হইবে।
প্রকৃত রোগ লক্ষণের অবস্থান, অনুভূতি, হ্রাসবৃদ্ধি ও আনুষাঙ্গিক অবস্থা স্পষ্টভাবে বুঝা যাইবে।
লক্ষণ ও চিহ্নের মধ্যে পার্থক্য কি ?
চিকিৎসকের নিকট যখন রোগী নিজে রোগ সম্পর্কে বা কষ্টকর উপসর্গ সম্বন্ধে বর্ণনা দেয় তখন রোগীর বর্ণিত কষ্টকর উপসর্গগুলিকে লক্ষণ বলে।
অপরদিকে চিকিৎসক রোগী পর্যবেক্ষণ করিয়া এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা দ্বারা রোগ সম্পর্কে যাহা জানিতে পারেন তাহাকে চিহ্ন বলে।
সুতরাং লক্ষণ হই

ল রোগ সম্পর্কে রোগীর নিজের বর্ণনা, আর চিহ্ন হইল পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ দ্বারা রোগ সম্পর্কে চিকিৎসকের ধারন। অনেক সময় লক্ষণ ও চিহ্ন হইতে পারে। যেমন একজন রোগী বলিল আমার বমির সহিত রক্ত বাহির হয়। এখানে রক্ত বমি একটি লক্ষণ। আবার যদি রোগী চিকিৎসকের সামনে রক্তবমি করে বা চিকিৎসককে রক্তবমি আনিয়া দেখায় তাহা হইলে এখানে রক্তবমি চিহ্ন।
হোমিওপ্যাথিতে রোগের লক্ষণ বলতে কী বোঝায় ?
মেটেরিয়া মেডিকায় বর্ণিত প্রতিটি ওষুধ যেন এক একটি রুগ্ন মানুষের প্রতিচ্ছবি অর্থাৎ স্বতন্ত্র লক্ষণ সমষ্টির একক চিত্র। সুস্থ শরীরে ওষুধ পরীক্ষা করে যেমন ওষুধের লক্ষণ সমষ্টি জানা যায় তেমনি প্রতিটি মানব স্বত্ত্বার অখণ্ডতা বিবেচনায় রেখে সামগ্রিক লক্ষণ নির্ণয় করা হয়। রোগ বা রোগের নাম নয়, লক্ষণ সমষ্টিই ওষুধ নির্বাচনের একমাত্র নিয়ামক।

প্রসঙ্গতঃ অ্যালোপ্যাথিসহ অন্যান্য চিকিৎসাক্ষেত্র এবং সাধারণ মানুষ মানব স্বত্ত্বার অখণ্ডতায় বিশ্বাস করলেও চিকিৎসা ক্ষেত্রে খণ্ডিত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে রোগের বিষয়টি দেখে থাকেন। রোগ যে অঙ্গেই আক্রমণ করুক না কেন, একই স্নায়ুমণ্ডলি ও রক্তস্রোতের অধীনে বলে পুরো মানুষটি রুগ্ন হয়ে থাকে। আধুনিক চিকিৎসায় এই বাস্তবতাকে গ্রহণ করা হয় না।

পক্ষান্তরে, রোগাক্রান্ত অঙ্গটিসহ পুরো মানুষটি রোগগ্রস্ত হয় হোমিওপ্যাথির এই বাস্তব বিশ্বাস এবং সেই নিরিখে দেহ, মন ও অঙ্গকে অবিচ্ছিন্নভাবে রুগ্ন ধরে নিয়ে চিকিৎসা দেয়ার নিয়মই হোমিওপ্যাথিকে অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি থেকে আলাদা করেছে। উদরাময়,আমাশয়, জ্বর, কাশি, নিউমোনিয়া, গলগণ্ড, গলস্টোন, অর্শ, ভগন্দর,টিউমার,র হার্নিয়া, একশিরা, মাথাবেদনা, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, যক্ষ্মা, ক্যানসার প্রভৃতি রোগের নাম যাই হোক না কেন, প্রকৃতপক্ষে পুরো মানুষটিই রুগ্ন হয়। অতএব, রোগ যাই হোক, চিকিৎসা হবে সামগ্রিক- এটাই হবে প্রকৃত সত্য।

হোমিওপ্যাথি সেই সত্যকে সামনে রেখে এর বিশেষ পদ্ধতিতে লক্ষণ সংগ্রহ করে এবং লক্ষণের গুরুত্বের ক্রমানুসারে লক্ষণগুলোকে ভাগ করে নেয়, যথা-

(১) মানসিক লক্ষণ– মন থেকে স্ংগৃহীত লক্ষণ মানসিক শ্রেণির, যেমন-ক্রোধ, হিংসা, অস্থিরতা, মনের ইচ্ছা-অনিচ্ছা ইত্যাদি।

(২) সার্বদৈহিক লক্ষণ– সমগ্র শরীর থেকে সংগৃহীত লক্ষণ হলো সার্বদৈহিক, যেমন- শরীরের উপর আবহাওয়াগত প্রভাব অর্থাৎ শীত, গরম বা বর্ষায় কাতর, গোসলে ইচ্ছা- অনিচ্ছা, ক্ষুধা, পিপাসা প্রভৃতি।

(৩) বিশেষ লক্ষণ– বিশেষ লক্ষণ বলতে রোগাক্রান্ত স্থানের আকৃতি-প্রকৃতি এবং এর লক্ষণ কখন কি অবস্থায় বাড়ে-কমে সেসব সংগ্রহ করা।

(৪) অসাধারণ লক্ষণ– যে সকল লক্ষণ রোগের সাধারণ বৈশিষ্ট্য অপেক্ষা ব্যতিক্রমধর্মী বা যাহা অদ্ভুত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসূচক, সুস্পষ্ট, যেখানে একটিমাত্র লক্ষণ একটিমাত্র ঔষধকে নির্দেশ করে এই জাতীয় লক্ষণকে অসাধারণ লক্ষণ বলে। যেমন- জলপানের ইচ্ছা পিপাসাহীনতা (আর্স, ক্যালাডি), বুক ধড়-ফড়ানিতে তাড়াতাড়ি হাঁটিলে উপশম (আর্জ নাইট)প্রভৃতি।

(৫) সাধারণ লক্ষণ– যে সকল লক্ষণ প্রায় সকল ঔষধে দেখা যায় বা কোন নির্দিষ্ট রোগের সকল রোগীর মধ্যে দেখা যায়, যাহা অস্পষ্ট, অনির্দিষ্ট ও বৈশিষ্ট্যহীন সে সকল লক্ষণকে সধারণ লক্ষণ বলে। যেমন- রক্ত আমাশয়, আঁচিল, শিরঃপীড়া প্রভৃতি।

(৬) চরিত্রগত লক্ষণ– কেন্টের মতেঃ রোগের যে সমস্ত লক্ষণ সাধারণ বুদ্ধিতে ব্যাখ্যা করা যায় না সেগুলোই পরিচায়ক বা চরিত্রগত লক্ষণ। উদ্ভেদ বিহীন হাম, প্রবল জ্বরে পিপাসাহীনতা, জিহ্বার শুষ্কতা সত্বেও জলপানে অনিচ্ছা, দেহে তীব্র জ্বলাবোধ থাকা সত্বেও গাত্রবরণ চাওয়া, উত্তাপে জ্বালাবোধের উপশম হওয়া প্রভৃতি।

(৭) অদ্ভুত লক্ষণ– যে সকল লক্ষণ দ্বারা রোগের কোন অদ্ভুত নিদর্শন প্রকাশ পায় উহাদিগকে অদ্ভুত লক্ষণ বলে। যেমন পক্ষাঘাত রোগীর পক্ষাঘাত অংশে তাপমাত্রা বেশি কিন্তু অন্য স্থানে কম। ইহা একটি অদ্ভুত লক্ষণ। কারণ পক্ষাঘাত অংশে শৈত্যভাব থাকাই স্বাভাবিক অথচ এই ক্ষেত্রে তাহার ব্যতিক্রম।

(৮) ধাতুগত লক্ষণ– যে লক্ষণগুলি রোগীর বিশেষ ধাতু প্রকৃতির পরিচয় দেয় সেগুলোকে ধাতুগত লক্ষণ বলে। চিররোগের ক্ষেত্রে এ ধরনের লক্ষণের গুরুত্ব অনেক বেশী। যাহাদের আপাত দৃষ্টিতে বিশেষ কোন রোগ আছে বলিয়া মনে হয় না অথচ সামান্য করনেই অসুস্থ হইয়া পড়ে কিংবা কোন সময়েই ঠিক সুস্থবোধ করেনা এই ধরনের লক্ষণ তাহাদের ক্ষেত্রে খুবইগুরুত্বপূর্ণ। যেমন- প্রায় সর্দি কাশিতে ভোগা, আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তনেই অসুস্থবোধ করা প্রভৃতি।

বলা বাহুল্য, রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগের নামের তেমন কোন মূল্য নেই। একিউট এবং ক্রনিক রোগ যেমনই হোক না কেন ব্যক্তিস্বাতন্ত্রীকরণ প্রণালীতে মানসিক ও সার্বদৈহিক, বিশেষ লক্ষণ সংগ্রহ করে তার সমন্বয়ে লক্ষণ সমষ্টি বা রোগচিত্র অংকন করা হয়। হোমিওপ্যাথিতে রোগ নির্ণয় ও ওষুধ নির্বাচনের এটাই একমাত্র পথ।

লক্ষণ স্বাস্থ্যের স্বাভাবিক অবস্থার বিকৃত পরিবর্তন বা পীড়ার অস্তিত্বের প্রমাণ। ইহা এমন একটি অবস্থা যাহা রোগী স্বয়ং তাহার নিকট আত্মীয় ও পার্শ্ববর্তী লোকজন এবং চিকিৎসক প্রত্যক্ষ করিয়া থাকেন।লক্ষণ শুধুমাএ রুগ্নাবস্থার বহিঃপ্রকাশ বা রোগের নিদর্শনই নয়, ইহা প্রতিকারক সদৃশ ঔষধ নির্বাচনের ও চাবিকাঠি।

What is symptoms according to homeopathy?

For a homeopath, symptoms are the important pointers to understand the sickness in the patient. These symptoms could be at the physical level known as physical symptoms or at mental level, commonly called mental symptoms.

একজন হোমিওপ্যাথের জন্য রোগীর অসুস্থতা বোঝার জন্য উপসর্গগুলি হল গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। এই লক্ষণগুলি শারীরিক স্তরে হতে পারে যা শারীরিক লক্ষণ হিসাবে পরিচিত বা মানসিক স্তরে, যাকে সাধারণত মানসিক লক্ষণ বলা হয়।

লক্ষ্মণ সংগ্রহের ব্যপারে আসা যাক। অর্গাননের ৮৩ থেকে ১০৩ পর্যন্ত সূত্রের ভিত্তিতে লক্ষ্মণ সংগ্রহ করতে হবে। যেমন—
Common diagnostic and uncommon individualistic symptoms অর্থাৎ PUSS—Peculiar, Uncommon, Striking and Singular;
Pathological symptoms অর্থাৎ morbid condition, location, sensation, modali

ties, physical changes, mental changes, subjective symptoms, objective symptoms;
Intellectual aspects;
Social aspects;
Environmental aspect;
Miasmatic Sphere;
Constitutional aspects;
Past history of the patient;
Family history;
Causation;
Iatrogenic sphere;
Generalities
রোগে কে আক্রান্ত হয়? দেহ না জীবনীশক্তি?
সার্বভৌম শক্তির আধার জীবনীশক্তির মানুষের দেহ রাজ্যের অধিপতি, ইহার নিয়ন্ত্রণেই দেহের সকল কার্য পরিচালিত হয়। এই জীবনীশক্তি রোগশক্তি দ্বারা আক্রান্ত হয়। অতীন্দ্রিয় অজড় অশুভ প্রাকৃতিক রোগশক্তি দ্বারা আক্রান্ত হইয়া বিকৃতাবস্থা প্রাপ্ত হয় এবং অসুস্থ হইয়া পড়ে।

রোগীর চিকিৎসার জন্য রোগের নাম কি গুরুত্বপূর্ণ ?

প্রায়ই বিতর্ক লাগে একটা বিষয় নিয়ে “আমরা লক্ষণের চিকিৎসা করি, রোগের চিকিৎসা করি না” (‘Treat the patient not the disease’) – এই কথার মানে কি দাঁড়ায়? আমাদের কি রোগ না জেনে শুধু মেটেরিয়া মেডিকার লক্ষণ জানলে হবে? কিন্তু তাহলে লক্ষণ কাকে বলে এবং রোগ কাকে বলে?

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা মতে তাই-ই রোগ, যা জীবনীশক্তির বিশৃংখলার কারণে উপসর্গ হিসাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রকাশ পায়। আর লক্ষণ বলতে ঐসব উপসর্গগুলোকেই বুঝায়। তাহলে রোগের কারণেই শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ প্রকাশ পায়। এসব লক্ষণগুলোর মধ্যে কিছু লক্ষণ আছে সাধারণ, আর কিছু আছে অসাধারণ/অদ্ভুত লক্ষণ। রোগ জানার জন্য সাধারণ লক্ষণ দরকার হয়, আর ঔষধ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন হয় অসাধারণ লক্ষণের।

রোগ সম্পর্কে জানলে কোনটা সাধারণ লক্ষণ এবং কোনটা বিশেষ লক্ষণ এই বিষয়গুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করা এবং রোগীর ব্যবস্থাপনা ও ভাবীফল কী হতে পারে তা নিয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারি। হোমিওপ্যাথিতে রোগের শ্রেণিবিভাগ প্রধানত চার ভাগে করা হয়েছে। যেমন:
১) স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে রোগ (Indisposition)
২) যান্ত্রিক কারণঘটিত রোগ (Mechanical injury)
৩) তীব্র রোগ (Acute disease)
৪) চিররোগ (Chronic disease)
Evaluation of Symptoms– লক্ষণের মূল্যায়ন
রোগীর লক্ষণের সাদৃশ্য আছে এমন ঔষধ প্রয়োগ করে রোগীকে আরোগ্য করাই হোমিওপ্যাথি। রোগীর রোগ সর্ম্পকে জানতে হলে লক্ষণসমষ্টিকে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। রোগী বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ নিয়ে চিকিৎসকের নিকট আসে, ওইসব লক্ষণ পর্যালোচনা করে যে রোগী-চিত্র আমরা পাই তার সাথে সাদৃশ্য আছে এমন ঔষধ প্রয়োগ করাই হলো হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতি। স্বাভাবিক ভাবেই মনে হবে, তাহলে রোগী যে লক্ষণ নিয়ে আসে সেই লক্ষণ যোগ করে যে ঔষধ আসে সে ঔষধটি প্রয়োগ করলেই কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে -এখানে আবার লক্ষণের মূল্যায়নের কি প্রয়োজন? আর এই ধারণাটি নিয়েই আমাদের দেশের অনেক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগণ চিকিৎসা করে যাচ্ছেন।

আমরা সচরাচর যে অবস্থাটি দেখতে পাই, একজন রোগী ১০ জন চিকিৎসকের নিকট গেলে ১০ ধরণের ঔষধ প্রেসক্রিপসন করি। আসলে কি রোগী ১০ ধরণের রোগী-চিত্র নিয়ে চিকিৎসকের নিকট এসেছিলেন! অবশ্যই তা নয়। আর ফলস্বরূপ অনেক রোগীকেই বলতে শোনা যায়, আমি অনেক জায়গায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক নিয়েছি কিন্তু সামান্য কিছু উপকার ছাড়া আর কিছু হয়নি, আরোগ্য তো দূরের কথা।

যাই হোক, অর্গাননের ১৫৪ সূত্রে মহাত্মা হ্যানিমান বলছেন,

যোগ্যতম ঔষধের লক্ষণতালিকা হইতে যে প্রতিরূপ প্রস্তুত করা হয় তাহার মধ্যে যদি সেই সকল বিচিত্র, অসাধারণ, অনন্য এবং বিশিষ্ট (পরিচায়ক) লক্ষণসমূহ বিদ্যমান থাকে- যেগুলি অধিকতম সংখ্যায় ও অধিকতম সাদৃশ্যসহ যে রোগ চিকিৎসা করতে হইবে তাহার মধ্যে দেখা যায়, তাহা হইলে সেই ঔষধই হইবে সেই রোগে সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত আরোগ্যদায়ক হোমিওপ্যাথিক ঔষধ। রোগ যদি খুব বেশি পুরাতন না হয় তা হইলে সাধারণত প্রথম মাত্রাতেই বেশি গোলযোগ ব্যতীত তাহা দূরীভূত ও বিনষ্ট হইবে।
-Samuel Hahnemann

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ঔষধ নির্বাচনে লক্ষণসমষ্টির গুণগত বৈশিষ্ট্যই হলো প্রধান, সংখ্যাগত ব্যাপারটি এখানে গৌণ। আরোগ্যদায়ক ঔষধ নির্বাচনে লক্ষণসমষ্টির ভিত্তিটি হচ্ছে সেই সকল লক্ষণ- যেগুলি বিচিত্র, অনন্য অসাধারণ হিসাবে ঔষধের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং অন্যান্য ঔষধ থেকে পার্থক্য নির্ণয় করে। যেমন, হঠাৎ ঠাণ্ডা লেগে কারো জ্বর আসলে আমরা সাধারণভাবে প্রায় সকলের মাঝেই যে সকল লক্ষণ দেখি- অরুচি, মাথাব্যথা, গাজ্বালা, অস্থিরতা। এই লক্ষণগুলো দেখে আমরা কোনো ঔষধ নির্বাচন করতে পারি না – যতক্ষণ পর্যন্ত না জানা যায় ঠাণ্ডা পানির অদম্য পিপাসা, মৃত্যুভয়, প্রচণ্ড অস্থিরতা। মনে হয় এ যাত্রায় আর বাঁচবে না তখন অ্যাকোনাইট বা আর্সেনিকামের কথা স্মরণ করতে দেরি হয় না। এই লক্ষণগুলো বিচিত্র, অসাধারণ, অনন্য। যা পর্যবেক্ষণ করে আমরা নিশ্চিতভাবে উপযুক্ত ঔষধ নির্বাচন করতে পারি।

মূল্যায়নের ক্ষেত্রে লক্ষণের গুরুত্বের অগ্রাধিকার–
জীবনীশক্তি বিশৃঙ্খল হলে আমাদের দেহ-মনে লক্ষণ আকারে তা প্রকাশ পায় এবং দেহের ও মনের এই লক্ষণগুলো দূর করতে পারলে জীবনীশক্তি পুনরায় শৃঙ্খলিত হয়। অশুভ শক্তি, তথা প্রকৃত রোগবীজ, তথা মায়াজমের প্রভাবে আমাদের ব্যক্তিত্ব পরিবর্তিত হয় এবং আমরা প্রকৃতিবিরূদ্ধ কাজ করে পূর্বে থেকে বিশৃঙ্খল জীবনীশক্তিকে আরও বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিই। সেক্ষেত্রে মায়াজমের প্রভাবে সৃষ্ট জীবনীশক্তির বিশৃঙ্খল অবস্থার প্রথম ছাপ পড়ে আমাদের মন ও শরীরের ফাংশনাল ক্রিয়াধারায়, ক্রমান্বয়ে তা প্রকাশিত হয় আমাদের প্যাথলজিকাল স্তরে।

যদি আমরা গুরুত্বের অগ্রাধিকার অনুসারে রোগ ও তার বহিঃপ্রকাশের অবস্থান তুলনা করতে চাই, তাহলে সাধারণভাবে নিম্নোক্ত ক্রমধারায় তা সাজাতে হয়-

মায়াজম– এই নেতিবাচক রোগশক্তির প্রভাব যখন আমাদের জীবনীশক্তিকে প্রভাবিত করে তখনই কেবল আমাদের রোগোৎপত্তি ঘটে থাকে। আমি মায়াজমকে সবার উপরে উল্লেখ করার কারণ মূলত মায়াজমই হচ্ছে রোগ- লক্ষণসমষ্টি তার রূপ, প্রকৃতি, তীব্রতা, বিস্তারের বহিঃপ্রকাশ। তাছাড়া মায়াজম আমাদের ইচ্ছাশক্তি ও প্রবণতাকেও পরিবর্তিত করে আমাদের বিচ্যুত ও বিকৃত ব্যক্তিত্ব তৈরি করে।

মন– মন আমাদের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ও প্রবণতার উৎস ও ক্ষেত্র। মনই মানুষের তার ব্যক্তিত্বের পরি

চায়ক। মহামতি ডা. কেন্টের ভাষায়,

Man consists in what he thinks and what he loves and there is nothing else in man.

আমরা যদি গুরুত্বের অগ্রাধিকারকে বিবেচনা করি তাহলে দেখতে পাবো। আমাদের ইচ্ছাশক্তি আমাদের এই মনের অধীন- যা মানুষ হিসাবে আমাদের প্রকৃত পরিচয়কে বহন করে, আর তারপর আসে আমাদের দেহ- যা মানুষ হিসাবে আমাদের চিহ্নগুলোকে বহন করে।

দেহ– দেহেরও বিভিন্ন পর্যায়, স্তর, বিভাগ আছে। এর মাঝেও বহুকিছু আছে যা মৌলিক, ভাইটাল, অপরিহার্য, আবার কিছু আছে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ।

একজন চিকিৎসকের কাজ মানুষ নিয়ে; তারা মানুষের মিস্ত্রি, মেরামতকারী। কাজেই সেই পূর্ণাঙ্গ মেরামতের কাজ, বা রোগীর স্বাস্থ্য পুনরূদ্ধার করতে তাকে মানুষের অস্তিত্ব ও তার এই পর্যায় বা মাত্রাগুলোর গুরুত্বের ধারাবাহিকতা ভালোভাবে বুঝতে হবে, জেনে নিতে হবে প্রকাশিত লক্ষণাবলীগুলোর বিভাগ ও গুরুত্ব। দেহে ও মনে প্রকাশিত লক্ষণাবলীতে সাধারণভাবে দু’ভাগে ভাগ করা যায়-
১. সর্বাঙ্গীন বা সার্ব-মনো-দৈহিক লক্ষণ ২. আঙ্গিক বা স্থানীয় লক্ষণ

সর্বাঙ্গীন লক্ষণকেও গুরুত্বের হিসাব অনুসারে আবার দু’ভাগে ভাগ করা যায়-
১. মানসিক সর্বাঙ্গীন লক্ষণ ২. দৈহিক সর্বাঙ্গীন লক্ষণ

একইভাবে গুরুত্বের ক্রমানুসারে মানসিক সর্বাঙ্গীন লক্ষণকে ভাগ করা যায় ছয়টি পর্যায়ে-
১. ইচ্ছাশক্তি
২. আবেগ
৩. বুদ্ধিবৃত্তি
৪. স্মৃতি
৫. স্বপ্ন
৬. উপরোক্ত পর্যায়গুলোর হ্রাস-বৃদ্ধি সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যাবলী

অন্যদিকে, দৈহিক সর্বাঙ্গীন লক্ষণের ব্যাপারে তার গুরুত্বানুসারে বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্যকে উল্লেখ করা যায় –
১. রোগীর খাদ্যে আকাঙ্ক্ষা ও বিতৃষ্ণা
২. বাহ্যিক উত্তেজনায় প্রতিক্রিয়া
৩. বিশেষ অনুভূতি
৪. ঘাম, ঘুম, পায়খানা-প্রস্রাব ইত্যাদি সার্বিক বৈশিষ্ট্য চিহ্নিতকারী বিষয়
৫. যৌন সম্পর্কীয় লক্ষণ ও হ্রাস-বৃদ্ধির মধ্যে যেগুলো মানুষের সার্বিক বৈশিষ্ট্য বহন করে
৬. আক্রান্ত পার্শ্ব ও কোনো বিশেষ অঙ্গে রোগাক্রমণের প্রবণতা
৭. স্রাবসমূহের গতি-প্রকৃতি যখন রোগীর বিশেষ ও সর্বাঙ্গীন বেশিষ্ট্যকে প্রকাশ করে
৮. লক্ষণের আগমন ও তিরোধাণের গতি- প্রকৃতি, ইত্যাদি।

আঙ্গিক বা স্থানীয় লক্ষণ– এই সকল সার্বদৈহিক লক্ষণের পর আসে স্থানীয় লক্ষণের গুরুত্ব। যদিও স্থানীয় লক্ষণগুলো নিয়ে আমি এখানে বিস্তারিত আলোচনায় যাচ্ছি না, তবে এটুকু মনে রাখতে অনুরোধ করছি- পূর্ণাঙ্গ রোগীচিত্র অঙ্কনের ক্ষেত্রে তাকেই বিবেচনা-বহির্ভূত রাখা চলবে না।

হোমিওপ্যাথি একটি হলিস্টিক ট্রিটমেন্ট সিস্টেম। রোগীর অখণ্ড প্রকৃতি নির্ণয় ও তার ভিত্তিতে ঔষধ নির্বাচনই এখানে মূল উদ্দেশ্য। কাজেই উপরে উল্লিখিত রোগের কারণ, তার বহিঃপ্রকাশ ও রোগীর অখণ্ড প্রকৃতি নির্ণয়ের লক্ষ্যে তার এই সার্বিক লক্ষণসমূহের চিত্রায়ণই চিকিৎসকের প্রথম কাজ। কিন্তু রোগীর সত্যিকারের প্রকৃতি, তার বিশেষ গুণবাচক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য চিত্রায়ণের জন্য কি কেবল উপর্যুক্ত তথ্যগুলোই যথেষ্ঠ?

না, আরো কথা আছে। এবার মনোযোগ দিতে সেই লিপিবদ্ধ লক্ষণগুলোরও বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলোর দিকে। মানুষের দেহ-মনে যতপ্রকার লক্ষণই প্রকাশিত হোক না কেন- তাকে তার এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে দুইভাগে ভাগ করা যায়- ১. সাধারণ লক্ষণ ২. অসাধারণ লক্ষণ

ঔষধ নির্বাচণে হ্যানিম্যান অর্গানন অব মেডেসিন গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন বিচিত্র, অসাধারণ, অনন্য এবং বিশিষ্ট (পরিচায়ক) লক্ষণসমূহই গুরুত্বপূর্ণ- সাধারণ লক্ষণ নয়। যেমন জ্বরে পানি পিপাসা এখানে সাধারণ লক্ষণ, পিপাসাহীনতা অসাধারণ লক্ষণ।

আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের লক্ষণের বর্ননা রোগীর কাছ থেকে শুনতে পাই ও তা লিপিবদ্ধ করি কিন্তু তা থেকে যদি আমরা বিশেষ, অনন্য, স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্বলিত রোগী-চিত্র তৈরি না করতে পারি- তাহলে সঠিক ঔষধে নির্বাচন করা কস্মিনকালেও সম্ভব হবে না। আর একারণেই এই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যজ্ঞাপক অন্তত কিছু লক্ষণকে চিহ্নিত করতে না পারলে, হাজার হাজার সাধারণ লক্ষণের কোনো মূল্য থাকে না। কাজেই রোগী-চিত্র তৈরি করতে হলে সর্বপ্রকার লক্ষণের যথাযথ মূল্যায়ন করে, তার উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ করে- এরপর তার সমষ্টির ভিত্তিকে কোন স্বতন্ত্র চিত্রটি তৈরি হয়, তা আমাদের দেখতে হবে। অতঃপর ঠিক একই রকম বিশিষ্টতা ও ধারাবাহিকতা নিয়ে আমাদের মেটেরিয়া মেডিকার কোন ঔষধটি উক্ত ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্বের উপর বহিঃপ্রকাশিত লক্ষণগুলোর সাথে সর্বাধিক সদৃশ তা খুঁজে বের করতে হবে। আর তখনই কেবল হোমিওপ্যাথির আদর্শ আরোগ্যের স্বাদ আস্বাদন করা সম্ভব।