Belladona_বেলেডোনা





হৃষ্টপুষ্ট, মোটাসোটা, হাস্যময়, প্রফুল্ল, প্রাণবন্ত, পিত্ত, রস ও রক্তপ্রধান ধাতুর লোক। উত্তাপ, আরক্তিমতা, দপদপকর ; ঢেউয়ের মতো অনুভূতি, জ্বালা, স্পর্শকাতরতা ও সংবেদনশীলতা। ব্যথা হঠাৎ আসে হঠাৎ যায়। অপরাহ্নে, সন্ধাকালে, বায়ু প্রবাহে, ঠান্ডা লাগালে পরে, সঞ্চালনে, ঘুমের শুরুতে ও ঘুমের সময়ে, স্পর্শে ও হাঁটলে বাড়ে। গরম ঘরে, অন্ধকারে, শুয়ে থাকলে ও উনুনের গরমে কমে। উৎকন্ঠা, দংশনে প্রবৃত্তি, খিটখিটে, অস্থিরতা ও স্নায়বিকতা, হঠাৎ চকিত হয়, প্রলাপ, ভ্রান্তবিশ্বাস ও ভয়। চুল কাটলে, সূর্যে, ঘাম চাপা পড়ায়, ঠান্ডায় রোগোৎপত্তি। জ্বরে শীত, উত্তাপ ও ঘামাবস্হাগোলো পর্যায়ক্রমে আসে।

বেলেডোনার ব্যথা নিচের দিকে ধাবিত হয় যেমন মাথা থেকে দূরে। সাইলিসিয়া ও জেলসের ব্যথা পিঠে ওপর দিকে ওঠে। স্হুলমাত্রার ব্যবহারে এর দ্বারা হৃদপিণ্ডের (নিউমোগ্যাস্ট্রিকের) পক্ষাঘাত, সিমপ্যাথেটিকের শক্তি বৃদ্ধি, হৃদপিণ্ডের ক্রিয়া দ্রুত এবং নাড়ি পূর্ণ ও বেগবতী হয়।

বেলেডোনার প্রধান তিনটি লক্ষনঃ ১। উত্তাপ ২। রক্তিমা ৩। জ্বলন অনেকে টাইফয়েডের ভয়ঙ্কর উত্তাপে Belladonna দিয়ে দেয়। এটি মোটেও উচিত নয়। কারন রোগের গতি ও ঔষধের গতি সমান হওয়া আবশ্যক। পাগলামিতে Belladonna, Hyoscy Niger এবং Stramonium এর তুলনা।

এই তিনতিকে মস্তিষ্কের ঔষধ বলা যায়। Belladonna রোগীর প্রচন্ডতা প্রধান। Hyoscy Niger তে প্রচন্ডতা থাকে না, এতে নিরর্থক গুনগুন প্রধান, প্রচন্ডতা আসে কখনো কখনো। Belladonna চেহারা লাল, Hyoscy Niger চেহারা হলুদ ও ক্ষীন। Hyoscy Niger এ দুর্বলতা দেখা যায়, আর দুর্বলতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এই দুর্বলতার জন্য রোগীর প্রচন্ডতা বেশিক্ষণ থাকে না। Hyoscy Niger তে প্রচন্ডতার সাথে পাগলামী শুরু হতে পারে কিন্তু দুর্বলতার জন্য ধীরে ধীরে কমতে থাকে। Stramonium এর প্রচন্ডতা আগের দুই ঔষধের তুলনায় অনেক বেশি। রোগী চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে গান করে, অট্টহাসি হাসে, চিল্লায়, প্রার্থনা করে, গালি দেয়। পাগলামী Stramonium তে সবচেয়ে বেশি, তারপর Belladonna এবং সবচেয়ে কম Hyoscy Niger। প্রচন্ডতার সাথে সাথে রোগীর অন্যান্য লক্ষন গুলি দেখে নেওয়া উচিত। যেমন Belladonna আলো সহ্য করতে পারে না, অপরদিকে Stramonium অন্ধকার সহ্য করতে পারে না।

Belladonna র দুটি লক্ষন কখনো ভুলা যায় না – “প্রচন্ডতা” ও “হঠাৎ”। রোগ অতি বেগে আসে, প্রচন্ডভাবে আক্রমণ করে তারপর হঠাৎ চলে যায়। “প্রচন্ডতা” ও “হঠাৎ” এই ঔষধের মূল লক্ষন। যেকোনো প্রকারের ব্যথা, প্রচন্ড মাথা ব্যথা, ধমনীর প্রচন্ড স্পন্দন, প্রচন্ড পাগলামী, প্রচন্ড ডীলিরিয়ম, প্রচন্ড খিচুনি। প্রচন্ডতা ও হঠাৎ এই দুটি লক্ষন Belladonna ও Aconite এ মিল আছে তাই এদের মধ্যে পার্থক্য জানা জরুরি।

Belladonna ও Aconite এর পার্থক্যঃ এই দুটি ঔষধ হৃষ্ট পুষ্ট ব্যক্তির জন্য উপযোগী।যেমন, স্বাস্থ্য সম্পন্ন ব্যক্তি কম কাপড় পড়ে রাতভর বাইরে ছিল, ঠান্ডায় রাতের শেষে বা পরের দিন সকালে কোনো রোগ হঠাৎ আক্রমণ হল ও প্রচন্ডতা দেখা দিল। দুটি ঔষধে অনেক মিল আছে, কিন্তু Belladonna তে মস্তিষ্কে তুফান ওঠে, জ্বরের সাথে প্রচন্ড মাথা ব্যথা হয়। Aconite এ রক্তের গতিতে তুফান ওঠে, বুকে ও হৃৎপিন্ডে ব্যথা হয়। যা পরে নিউমোনিয়া, কাশি, জ্বর হয়ে যায়।

Aconite সঙ্গে Belladonna: Aconite- এ রক্তাধিক্য, Belladonna অপেক্ষা অল্প। Belladonna আবৃত অঙ্গে ঘর্ম থাকে, Aconite নাই। Belladonna মৃত্যু ভয় থাকেনা, প্রলাপ থাকে। Aconite-এ প্রলাপ থাকে না, মৃত্যু ভয় থাকে। Belladonna-এ তন্দ্রা ও নিদ্রা হইতে চমকাইয়া উঠা লক্ষণ বেশী, Aconite-এ অস্থিরতা বেশী।

Glonoinum সঙ্গে Belladonna: Belladonna- মস্তকের দপ্ দপ্ কর বেদনা এর প্রধান লক্ষণ। Glonoinum- এই লক্ষণ আছে। Belladonna- মস্তক পশ্চৎদিকে বক্র করলে রোগী উপশম, Glonoinum- এ বৃদ্ধি পায়।

Hyoscyamus ,Belladonna, Stramonium: এ তিনটি প্রলাপের প্রধান ঔষধ। Belladonna: মস্তিষ্কে অধিক রক্তসঞ্চয় থাকে, প্রলাপে অত্যন্ত প্রচন্ডতা থাকে। Hyoscyamus: চোখ ও মুখে অরক্ততা এবং ধমনীর দপদপানি থাকেনা। প্রলাপ অপেক্ষাকৃত মৃদু। Stramonium: এরা শরীরের কাপড় টানিয়া ফেলিয়া দেয়, শয্যবস্ত্র খুটিতে থাকে, কিংবা কিছু ধরার জন্য শূণ্যে হাত বাড়ায়।

Who we are and what we do.



সুচিপত্র বিস্তারিত আলোচনা
সমনাম এটরোপা বেলেডোনা, বেলেডোনা বেক্সি ফেরা, ডেডলি নাইট সেড, বিউটিফুল লেডি, বিট্রিকোটোমা টলক্রাউট, সোলানাম ফিউরিওসাম।
উৎস উদ্ভিজ্জ।
প্রাপ্তিস্থান ইউরোপে এই সকল গাছ জম্মায়া থাকে। ভারতের হিমালয় অঞ্চলে ছয় হাজার হইতে বার হাজার ফুট উঁচু স্থানে (সিমলা হইতে কাশ্মীর পর্যন্ত বিস্তৃত)ইহা প্রচুর পরিমাণে জম্মে।
প্রুভার ডা.স্যামুয়েল হ্যানিম্যান, ভিয়েনা প্রুভারস সোসাইটি, নিউয়র্ক মেডিকেল সোসাইটি।
কাতরতা শীতকাতর, গরমকাতর।
মায়াজম সোরিক, টিউবারকুলার, সিফিলিটিক।
ত্রিয়াস্থল মস্তিষ্ক, স্নায়ুকেন্দ্র, রক্তবাহিনালী, কৈশিকনালী, শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী, চক্ষু, মুখ, গহ্বর, গলদেশ, গাত্রচর্ম, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস।
ঔষধের নিজস্ব কথা ১ম কথাঃ -উত্তপ ও আরক্তিমতা।
২য় কথাঃ -জ্বালা ও স্পর্শকাতরতা।
৩য় কথাঃ -আকাস্মিকতা ও ভীষণতা।
৪র্থ কথাঃ -ব্যথা হঠাৎ আসে হঠাৎ যায়।
মানসিক লক্ষণ চরিত্রঃ শান্ত, সান্তানায় বৃদ্ধি, কটুভাষী, লাজুক, লজ্জাহীন, দুশ্চরিত্রতা, অসন্তষ্ট, সন্দেহযুক্ত, অভিসম্পাত দেয়, বোকার ন্যায় ব্যবহার, দুর্দান্ত ভাব, দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ছিদ্রান্বেষী, কেউ বিষ খাওয়াবে এরূপ, গান করে, গান করে (ক্রন্দনের সঙ্গে, জ্বরের সময়, নিদ্রার মধ্যে)।
চমকে ওঠাঃ ঘুমের মধ্যে।
ভ্রান্ত বিশ্বাস যেন তার পিছনে কেউ আছে, অপমানিত হয়েছে ভাবে, অপরের মুখে থুতু দেওয়া।
ভুল করে স্থান সম্বন্ধে।
ভুলে যায় স্মৃতিশক্তি।
কথা অসংলগ্ন।
ভয় সাপের, কুকুরের, মৃত্যুর, ভুতের, পানির।
ক্রন্দন সহজে, ঘুমের মধ্যে।
ইচ্ছা হত্যা করার, চুরি করার, আত্মহত্যা, বাড়ি যেতে চায়, উলঙ্গ হতে চায়, দংশন,প্রবৃত্তি।
বিরূপ ভাব
প্রলাপ বিড়বিড় করে।
একক লক্ষণ কাতর শব্দের সঙ্গে গান করে।
জিহ্বার লক্ষণ 1G -সাদা, লাল, শুষ্কতা, স্ফীতি, জিহবাকন্টক খাড়া হয়ে থাকে।
2G -বাদামী বর্ণ, কম্পন অনুভূতি ফাটলযুক্ত।
3G -কিনারাদ্বয় লাল, হলদে, দুলতে থাকে বা বহিনির্গত।
পার্শ্ব 1G -ডানে।
2G -একপাশে।
3G -ডানের পর বামে, বামে।
গঠন 2G -মেদ প্রবণতা।
3G -শিশুদের মেদ প্রবণতা, শিশুদের শীর্ণতা।
মল 2G -কঠিন, গুটি গুটি শ্লেষ্মাযুক্ত বা পিচ্ছিল, নিম্ফল মলবেগ ও কুন্থন।
মূত্র চরিত্র -হাঁটলে প্রস্রাব হয়ে যায়।
জ্বালা -মূত্র ত্যাগকালে।
বর্ণ -হালকা হলুদ।
তলানি -পাথর, শ্লেষ্মা।
শয়ন ও নিদ্রার 1G -গভীর নিদ্রা, নিদ্রাহীনতা, ঘুম ঘুম ভাব।
2G -অতৃপ্তিকর নিদ্রা, উপুড় হয়ে।
3G -বসে বসে ঘুমায়, মাথার নিচে হাত রেখে ঘুমায়।
স্বপ্ন 1G -।
2G -।
3G -।
একক লক্ষণ -।
ঘর্ম 1G -প্রভুত ঘর্ম, নিদ্রার মধ্যে ঘর্ম, ঘর্ম অবরূদ্ধ হওয়ার ফলে পীড়া।
স্নানে 1G -ভয়, বৃদ্ধি, ঠান্ডা জলে স্নান বৃদ্ধি।
হ্রাস-বৃদ্ধি বৃদ্ধিঃ গরম ঘরে, উত্তাপ ও নড়াচড়ায়, রাতে। হ্রাসঃ ঠান্ডা, গোসলে, মুক্ত বাতাসে।
ওষুধের সাথে সম্পর্ক
  • অনুপূরক ঔষধঃ Natrium Muriaticum
  • পরবর্তী ঔষধঃ Arnica Mont, Arsenic Alb, Graphitic, Idiom, Lycopodium, Pulsatila, Natrum Mur, Stramonium, Sulphar.
  • শত্রুভাবাপন্ন ঔষধঃ Rhus toxicodendron
  • প্রতিষেধক ঔষধঃ এসিড কার্বলিক, এসিড লাকেসিস, ক্যানথারিস, ইপিকাক, লিডমপাল, নেট্রামা মিউর, প্লানটেগো
ক্রিয়াকাল ৭-১৫ দিন।