Principles of Homeopathy



x
History of Medicine_চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস।
জীব জগতের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ের জন্য সৃষ্টির আদি থেকে প্রকৃতিতে বিদ্যমান উদ্ভিদকুলের উপর মানুষ নির্ভর করে আসছে। প্রকৃতিই মানুষকে শিখিয়েছে বিভিন্ন অসুস্থতায় ও স্বাস্থ্য রক্ষায় উদ্ভিদের ব্যবহার। আদিকাল থেকে প্রকৃতিলব্ধ এই জ্ঞান স্বাভাবিক নিয়মে মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এখন বিশ্বের কমপক্ষে ৪০০ কোটি লোক ভেষজ চিকিৎসার উপর নির্ভরশীল।

আদিকালে ভেষজ চিকিৎসায় ঔষধি উদ্ভিদ যেভাবে ব্যবহার করা হতো, বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে তা আরও উন্নত উপায়ে ব্যবহার করা হচেছ। উদ্ভিদ প্রক্রিয়া হতে বা নির্যাস করে এর কার্যকরী উপাদান আলাদা করে ব্যবহারের ফলে রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় সহজতর হচ্ছে।

ঔষধি উদ্ভিদ ও ভেষজের ইতিহাসে লক্ষিত হয় যে, পৃথিবীর প্রথম মানব-মানবী আদম (আঃ) এবং হাওয়া বেহেস্তের মধ্যে ‘উদ’ গাছের পাতা ব্যবহার করে উদ্ভিদ ব্যবহারের সূচনা করেন (আল-কোরআন)। হযরত মুসা (আঃ) এর সময় নিম গাছের বিভিন্ন অংশ চর্ম রোগ আরোগ্যে ব্যবহার করা হতো। এবং হযরত মুহম্মদ (সঃ) বলেছেন, কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত প্রত্যেক রোগেই উপকারি (বুখারী, মুসলিম)।

গ্রীসে প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসা পদ্ধতির সূচনা হয়। গ্রীসের আরবী নাম ইউনান। এ কারণে এ চিকিৎসা পদ্ধতি সরাসরি ইউনানী পদ্ধতি হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠে। ইউনানী চিকিৎসা বিজ্ঞানের মূল হাকিম ইসকালিবুস (ইসক্লেপিয়াস) হযরত ইদ্রিস (আঃ) এর নিকট চিকিৎসা বিদ্যা আয়ত্ব করেন এবং জন্মভূমি গ্রীসে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি তন্ত্রমন্ত্র এবং তাবিজ কবজের পরিবর্তে স্থানীয় গাছ গাছড়া, লতাপাতা, জড়িবুটি ইত্যাদি দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন এবং যথেষ্ট সফলতা অর্জন করেন। হাকিম ইসকালিবুসের কন্যা হাইজিয়া স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিদ্যা ও প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট সফলতা অর্জন করেছিলেন। সে সম্মানে আজও চিকিৎসা বিজ্ঞানে হাইজিন একটি পাঠ্য বিষয় হিসাবে গণ্য।

হাকিম ইসকালিবুসের মৃত্যুর প্রায় চারশত বছর পর তাঁরই বংশোদ্ভুত হাকিম শোকরাত (হিপোক্রিটাস) চিকিৎসা বিজ্ঞানের ওপর আরোপিত সকল বিধিনিষেধের বেড়াজাল ভেঙ্গে সকল চিকিৎসকের জন্যে একটি শপথনামা প্রণয়ন করেন, যা আজও সম্মানের সঙ্গে পঠিত এবং পালিত হয়। তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের যাবতীয় বিষয়বস্তু লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষণ করা শুরু করেন।

হাকিম জালিনুসের (গ্যালেন) সময়ই চিকিৎসা বিজ্ঞানের উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হয়। জালিনুস বা গ্যালেন উল্লেখ করেন যে, অসুস্থতা-নিরোধ এবং আরোগ্য প্রদানে তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, সৃষ্টিকর্তা মানুষের ব্যবহারের জন্য উদ্ভিদজগৎ সৃষ্টি করেছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, সৃষ্টিকর্তাই এমন সকল চিহ্ন দিয়ে দিয়েছেন যার দ্বারা কোন্ উদ্ভিদ কোন্ কাজে (রোগে) লাগবে তা বোঝা যায়।

x
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসকে মোটামুটি নিম্মোত্ত শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।
১. প্রাগৈতিহাসিক যুগ।
২. ঐতিহাসিক যুগ।
৩. বিজ্ঞানমুখী যুগ।
৪. বৈজ্ঞানিক যুগ।
৫. আধুনিক বিজ্ঞানের স্বর্ণযুগ।

১. প্রাগৈতিহাসিক যুগ।
প্রাগৈতিহাসিক যুগ ছিল কুসংস্কারে পরিপূর্ণ। রোগের কারণ সম্বন্ধে তখনকার সময়ের মানুষ অবহিত ছিল না। তখনকার সময়ে মনে করা হত অলৌকিক কোন শক্তির প্রভাবে অর্থাৎ ভূত-প্রেত, দৈত্য-দানব প্রভৃতি অশরীরী শক্তির প্রভাবেই রোগ সৃষ্টি হয়। যেহেতু অশরীরী বা অশুভ শক্তির প্রভাবে মানুষ রোগাক্রান্ত হয় তাই যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ দ্বারা মানুষ ঐ অশুভ শক্তিকে দূরীভূত বা বিতাড়িত করার প্রচেষ্টা চালায়। তখনকার দিনে মূলত ধর্মযাজকরাই ঝাড়-ফুক, তন্ত্রমন্ত্র, তাবিজ, কবজ, মাদুলী প্রভৃতি দ্বারা চিকিৎসা কার্য পরিচালনা করতেন।

২. ঐতিহাসিক যুগ।
ক. হিপোক্রেটিস যুগের চিকিৎসা।
খ. প্লাটোর যুগের চিকিৎসা।
গ. এরিষ্টটলের যুগের চিকিৎসা।
ঘ. গ্যালেনের যুগের চিকিৎসা।
ঙ. ভারতীয় চিকিৎসা।
চ. আরব্য চিকিৎসা (ইবনে সিনা)।
ছ. প্যারাসেলসাসের যুগের চিকিৎসা।
জ. মেসমারের যুগের চিকিৎসা।

৩. বিজ্ঞানমুখী যুগ।
বিজ্ঞানমুখী যুগে প্রি-মেডিকেল বিষয় রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, জীববিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা প্রভৃতির উন্নতি ঘটে। হিপোক্রেটিসের বিসদৃশ বিধান এই সময়েই প্রতিষ্ঠিত হয়, যাহা বর্তমানে এলোপ্যাথিক চিকিৎসা নামে পরিচিত। এই সময়ে তিন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা লাভ করে-এলোপ্যাথিক, আয়ুর্বেদীয় ও ইউনানী। একমাত্র রাষ্ট্রীয় সাহায্যপুষ্ট এলোপ্যাথিক চিকিৎসাই বিজ্ঞানমুখী হইয়া শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করে।

৪. বৈজ্ঞানিক যুগ।
এই যুগে চিকিৎসা বিদ্যার ব্যাপক উন্নতি ঘটে এবং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আবিস্কারের ফলে এক বিপবাত্মক পরিবর্তন সাধিত হয়। লুইপাস্তরের জীবাণু আবিস্কার, কক কর্তৃক যক্ষ্মার জীবাণু আবিস্কার, আইজ্যাক নিউটনের পদার্থবিদ্যায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু আবিস্কার, রসায়ন, জীববিদ্যা ও উদ্ভিত বিদ্যার ব্যাপক উন্নতি প্রভৃতি চিকিৎসা বিদ্যার উন্নতিতে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। হিপোক্রেটিসের বিসদৃশনীতির চিকিৎসা রাষ্ট্রীয় সাহায্যপুষ্ট হইলে ও সেই সাথে সাথে আয়ুর্বেদীয় ও ইউনানী চিকিৎসা প্রচলিত থাকে। অথচ হিপোক্রেটিসের অন্য দিকে সদৃশনীতির কোন উন্নতি সাধিত হয় নাই। তবে প্রচলিত শ্রেষ্ঠতম চিকিৎসা বলিতে শুধু এলোপ্যাথিক চিকিৎসাই প্রাধান্য লাভ করে।

৫. আধুনিক বিজ্ঞানের স্বর্ণযুগ।
ডাক্তার হ্যানিমান অষ্টাদশ শতাব্দীতেই হিপোক্রেটিসের প্রথম পদ্ধতি ব্যর্থ প্রমাণ করিয়া সদৃশ বিধানের সার্থকতা তুলিয়া ধরেন এবং রোগারোগ্য প্রাকৃতিক বিধানের আবিস্কার দ্বারা এক নবতর আরোগ্য কলার উদ্ভাবন করেন। এই চিকিৎসা পদ্ধতি হোমিওপ্যাথি নামে খ্যাত। এলোপ্যাথি চিকিৎসায় প্রকৃত আরোগ্য লাভে ব্যর্থতা এবং হোমিও চিকিৎসায় অর্থাৎ সদৃশ বিধানে রোগীর পূর্ণ সুস্থতা ও আরোগ্য লাভের ফলে হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রসার বৃদ্ধি পাইতে থাকে। জার্মানী হইতে সারা বিশ্বে ধীরে ধীরে এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়। সৃষ্টি হয় চিকিৎসার এক নব দিগন্ত, প্রত্যয়দীপ্ত সম্ভাবনার যুগ। আধুনিক বিজ্ঞানের স্বর্ণযুগে বর্তমানে হোমিওপ্যাথি, এলোপ্যাথি, আয়ুর্বেদীয় ও ইউনানী এই চারটি চিকিৎসা পদ্ধতি প্রচলিত।
x
চিকিৎসাবিদ্যা অনেকগুলো শাখায় বিভক্ত। এগুলোকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।
প্রাথমিক বা বেসিক- বেসিক শাখাগুলোর মধ্যে রয়েছে এনাটমী বা অঙ্গংস্থানতত্ত্ব, ফিজিওলজি বা শারীরতত্ত্ব, বায়োকেমিস্ট্রি বা প্রাণরসায়ন ইত্যাদি।
প্যারাক্লিনিক্যাল- প্যারাক্লিনিক্যাল শাখার মধ্যে অণুজীববিদ্যা, রোগতত্ত্ব বা প্যাথোলজি, ভেষজতত্ত্ব বা ফার্মাকোলজি অন্যতম।
ক্লিনিক্যাল- ক্লিনিক্যাল হলো প্রায়োগিক চিকিৎসাবিদ্যা। এর প্রধান দুটি শাখা হলো, মেডিসিন এবং শল্যচিকিৎসা বা সার্জারি।
আরও আছে ধাতৃ ও স্ত্রীরোগবিদ্যা, শিশুরোগবিদ্যা বা পেডিয়াট্রিক্স, মনোরোগবিদ্যা বা সাইকিয়াট্রি, ইমেজিং ও রেডিওলোজি ইত্যাদি। এগুলোর সবগুলোরই আবার বহু বিশেষায়িত্ব শাখা রয়েছে।

১. এনাটমি- এনাটমি হচ্ছে জীবের শারীরিক কাঠামো নিয়ে অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যা । তাছাড়া ম্যাক্রোস্কোপিক বা গ্রস এনাটমি , সায়োটোলজি এবং হিস্টোলজিও তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়।
২. জৈব রসায়ন- জীবজন্তুর ক্ষেত্রে বিশেষ করে কাঠামোগত পদার্থের গঠন এবং কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করে।
৩. বায়োমেকানিকস- বায়োমেকানিকস হল যান্ত্রিক পদ্ধতির দ্বারা জৈবিক পদ্ধতির কাঠামো এবং ক্রিয়াকলাপের অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যা।
৪. বায়োস্ট্যাটিক্স- বায়োস্ট্যাটিক্স হল জীববিজ্ঞান এর বিস্তৃত প্রয়োগ । বায়োস্ট্যাটিক্সের জ্ঞান চিকিৎসা গবেষণার পরিকল্পনা, মূল্যায়ন এবং ব্যাখ্যার জন্য অপরিহার্য। এটি মহামারীবিদ্যা এবং প্রমাণ ভিত্তিক ঔষধের জন্যও মৌলিক বিষয় হিসাবে কাজ করে।
৫. জীবজগতবিজ্ঞান- এটি আন্তঃসম্পর্কিত একটি বিজ্ঞান যা জৈবিক পদ্ধতিগুলি অধ্যয়ন করার জন্য পদার্থবিজ্ঞান ও শারীরিক রসায়ন পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে থাকে।
৬. কোষবিদ্যা- এটি পৃথক কোষগুলির মাইক্রোস্কোপিক গবেষণা সংক্রান্ত বিদ্যা।
৭. ভ্রূণবিদ্যা- এটি কী করে ভ্রূণের বিকাশ ঘটে তা নিয়ে গবেষণা সংক্রান্ত বিদ্যা। ১৮৮৫ সালে লুই পাস্তুর তার পরীক্ষাগারে ভ্রূণবিদ্যা নিয়ে প্রথম গবেষণা করেছিল।
৮. এন্ডোক্রিনোলজি- এটি হরমোন এবং পশুদের সমগ্র শরীর জুড়ে তাদের প্রভাব নিয়ে অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যা।
৯. মহামারীবিদ্যা- মহামারী রোগের প্রক্রিয়ায় জনসংখ্যাতাত্ত্বিক গবেষণা কাজে এই বিষয়টি ব্যবহৃত হয়, কিন্তু এটি শুধু মহামারী গবেষণা কাজের মধ্যেই সীমিত নয়।
১০. জেনেটিক্স- জিন গবেষণা, জৈবিক উত্তরাধিকার এবং তাদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করে।
১১. হিস্টোলজি- এটি আলোর মাইক্রোস্কোপি, ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপি এবং ইমিউনোহিসটোমমিশ্রিয়া দ্বারা জৈবিক টিস্যুর গঠনগুলির অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যা।
১২. ইমিউনোলজি- ইমিউন সিস্টেম নিয়ে অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যা , উদাহরণস্বরূপ, যা মানুষের মধ্যে সহজাত এবং অভিযোজিত ইমিউন সিস্টেম নিয়ে আলোচনা করে।
১৩. চিকিৎসা পদার্থবিদ্যা- চিকিৎসা ক্ষেত্রে পদার্থবিজ্ঞানের নীতির প্রয়োগগুলি নিয়ে আলোকপাত করে।
১৪. মাইক্রোবায়োলজি- এটি প্রোটোজোয়া, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গি এবং ভাইরাস সহ সুক্ষতত্ত্ব নিয়ে অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যা।
১৫. আণবিক জীববিদ্যা- জেনেটিক উপাদান এর প্রতিলিপি এবং অনুবাদ প্রক্রিয়ার আণবিক ভিত্তি নিয়ে অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যা।
১৬. স্নায়ুবিজ্ঞান- এটি স্নায়ুতন্ত্রের গবেষণার সাথে সম্পর্কিত বিজ্ঞানগুলির অন্তর্ভুক্ত। স্নায়ুবিজ্ঞান এর প্রধান আলোচ্য বিষয় হল মানব মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ড। স্নায়ুবিদ্যা, নিউরো-সার্জারি এবং মানসিক রোগ সংক্রান্ত বিষয়গুলো স্নায়ুবিজ্ঞান এর অন্তর্ভুক্ত।
১৭. পুষ্টি বিজ্ঞান- (তাত্ত্বিক ফোকাস) এবং ডাইটিটিক্স (বাস্তব ফোকাস) খাদ্য এবং পানির সাথে স্বাস্থ্য, রোগের সম্পর্ক নিয়ে আলোকপাত করে। চিকিৎসা পুষ্টি থেরাপি মূলত ডায়েটিশিয়ান দ্বারা পরিচালিত হয় এবং বিভিন্ন রোগ যেমন ,ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার রোগ, ওজন এবং খাবার গ্রহণের মাধ্যমে যে রোগ হয়, এলার্জি, অপুষ্টি, এবং নিউপ্লাস্টিক রোগের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়।
১৮. প্যাথলজি- এটি রোগের কারণ, কোর্স, অগ্রগতি এবং তার রেজোল্যুশন নিয়ে গবেষণা সংক্রান্ত বিদ্যা।
১৯. ফার্মাকোলজি – এটি মূলত ড্রাগ এবং তাদের কর্ম প্রণালী নিয়ে পর্যালোচনা করে।
ফোটোবায়োলজি- এটি non- ionizing এর বিকিরণ এবং জীবন্ত প্রাণীর মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া নিয়ে অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যা।
২০. শারীরবৃত্তীয়- শরীরের সাধারণ কাজ এবং অন্তর্নিহিত নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা সংক্রান্ত বিদ্যা।
২১. রেডিওবায়োলজি- আয়নীকরণ , বিকিরণ এবং জীবন্ত প্রাণীর মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া সম্পর্কিত গবেষণা সংক্রান্ত বিদ্যা।
২২. বিষক্রিয়াবিদ্যা- এটি ওষুধ এর বিষাক্ত এবং বিপজ্জনক প্রভাব নিয়ে গবেষণা সংক্রান্ত বিদ্যা।
x
History of Medicine_চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস।
ক্রিস্টিয়ান ফ্রিডরিখ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান (১০ এপ্রিল ১৭৫৫ – ২ জুলাই ১৮৪৩) জার্মানির একজন বিখ্যাত চিকিৎসক ছিলেন, তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার আবিষ্কারক।

হ্যানিম্যান ১৮০৫ সালে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা চালু করেন। ১৮১০ সালে চিকিৎসা নিয়মাবলী সংক্রান্ত গ্রন্থ অর্গানন অব রেসনাল হেলিং আর্ট (Organon der rationellen Heilkunde) জার্মানি ভাষায় প্রকাশ করেন যা পরবর্তীকালে অর্গানন অব মেডিসিন নামে প্রকাশিত হয়। তিনি ১৮১২ সালের ২৯ শে সেপ্টেম্বর হতে ১৮২১ সাল পর্যন্ত লিপজিগ বিশ্বিবিদ্যালয়ে হোমিওপ্যাথি বিষয়ে শিক্ষা দান করেন। তিনি ১৮৩৫ সালের জুন মাসে জার্মানি ছেড়ে প্যারিসে বসবাস শুরু করেন এবং ১৮৪৩ সালে প্যারিসেই মৃত্যুবরণ করেন।

স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের বাল্যকাল
জামুয়্যেল হ্যানিম্যান (জার্মান উচ্চারণ) জার্মানির সাক্সনী রাজ্যের ড্রেসড্রেন শহরের নিকটে মিশেনে জন্মগ্রহণ করেন।

পিতা- ক্রিশ্চিয়ান গটফ্রিড হ্যানিম্যান Christian Gottfried Hahnemann চীনামাটির পাত্রের জন্য বিখ্যাত শহর মিশেনে একজন চীনামাটির পাত্রের ডিজাইনার ও পেইন্টার ছিলেন। তিনি পিতা মাতার ৫ জন সন্তানের মধ্য ৩য় ছিলেন এবং শিশু বয়সেই বিজ্ঞান ও ভাষা শিক্ষায় দক্ষতা প্রদর্শন করেন।

মাতা- জোহানা ক্রিশ্চিয়ানা (Johonna Christiana) ছিলেন তার পিতার দ্বিতীয় স্ত্রী। তার গর্ভে স্যামুয়েল হ্যানিম্যান ছাড়াও অগাস্ট হ্যানিম্যান (August Hahnemann), চার্লোটি হ্যানিম্যান (Charlotee Hahnemann) ও মিনা হ্যানিম্যান (Minna Hahnemann) নামে এক ভাই ও দু’ বোনের জন্ম হয়।

পিতামহ- ক্রিস্টফ হ্যানিম্যান (Christoph Hahnemann) তিনি জার্মানির লচেস্টেডে রং-তুলির কাজ করতেন।

স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের শিক্ষা জীবন
স্যামুয়েল হ্যানিম্যান এর বাল্যশিক্ষা ও লেখাপড়ায় হাতে খড়ি হয় বাবা-মায়ের কাছ থেকে। ১৭৬৭ সালের ২০ জুলাই ১২ বছর ২ মাস ১০ দিন বয়সে তাকে মিসেনের টাউন স্কুলে ভর্তি করা হয়। অতঃপর তিনি ১৭৭৪ সালের ২০ নভেম্বর ১৯ বছর বয়সে ফার্স্টেন অ্যাডল্যান্ডে স্কুল সেন্ট আফ্রা স্কুলে ভর্তি হন। এখানে তিনি হিপোক্র্যাটিসের লেখার সাথে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি ল্যাটিন, গ্রীক ও হিব্রু ভাষা এবং ইতিহাস, পদার্থবিদ্যা ও উদ্ভিদবিদ্যা শিক্ষা লাভ করেন। চিকিৎসা বিদ্যা ছিল তার প্রিয় বিষয়। ১৭৭৫ সালে বিশ বছর বয়সে তিনি লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু তিনি এ প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা ও কম সুযোগ সুবিধার জন্য অস্বস্তি বোধ করেন। মেডিসিন শিক্ষার্থীদের জন্য লিপজিগে না ছিল ক্লিনিক, না ছিল হাসপাতাল। হ্যানিম্যান লিপজিগে ঔষধ নিয়ে দুই বছর পড়াশোনা করেন। তার আয় কম থাকার কারণে তিনি অর্থের বিনিময়ে ইংরেজি হতে বই অনুবাদ এবং ধনী গ্রীকদেরকে ফ্রেঞ্চ ভাষা শিখানোর কাজ শুরু করেন। এভাবেই হ্যানিম্যান এর নিয়মিত ছাত্রজীবনের ইতি ঘটে।

পরবর্তীতে ১৭৭৭ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনার লিওপোল্ডস্টট জেলার ব্রাদার্স অব মার্সি হাসপাতালে চিকিৎসা বিদ্যা শিখতে আসেন। এখানে তিনি হিপোক্রিটাস, গ্যালেন ও স্টোয়ার্কের লেখাগুলিা সম্পর্কে ভালভাবে জানতে পারেন। এছাড়াও প্রখ্যাত চিকিৎসক জেভন কোয়ারিনের প্রত্যক্ষ সহানুভূতি লাভ করে তার কাছে হাতে কলমে রোগী দেখার শিক্ষা পান। এ হাসপাতালে নয় মাস থাকার পর ছাত্রাবাস হতে হ্যানিম্যানের অর্থ চুরি যাবার ফলে ও দারিদ্রতার কারণে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। তখন প্রফেসর জেভন কোয়ারিনের সহযোগিতায় তিনি ট্রানসেলভ্যানিয়ার গভর্নর ব্যারণ এস ভন ব্রউঁকেনথল এর সাথে হার্মানস্ট্যাটে চলে যান। এখানে তিনি গভর্নরের মুদ্রা ও চিত্রকর্মের সংগ্রহশালার তত্ত্বাবধায়ক, লাইব্রেরিয়ান ও পারিবারিক চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন। একই সাথে হাতে কলমে বাইরের রোগী দেখার ও ব্যাপক পড়াশুনার সুযোগ পান। এরপর আবার ১ বছর ৯ মাস পরে ১৭৭৯ সালে এরল্যাঞ্জেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। এখানে তিনি হেফ্রাথ স্কেবারের কাছে এসে উদ্ভিদ বিদ্যায় পারদর্শী হন এবং ১৭৭৯ সালের ১০ ই আগস্ট চিকিৎসাবিদ্যায় ডক্টরেট অব মেডিসিন বা এম.ডি ডিগ্রী লাভ করেন। এ ডিগ্রী লাভের জন্য হ্যানিম্যান “ আপেক্ষিক রোগের কারণ ও এর চিকিৎসা” (Conspectus adfectuum spasmodicorum aetiologicus et therapeuticus) বিষয়ে ২০ পৃষ্ঠা ব্যাপী একখানা ছাপানো গবেষণাপত্র পেশ করেছিলেন।

ভাষাবিদ, অনুবাদক ও লেখক হিসাবে স্যামুয়েল হ্যানিম্যান
স্যামুয়েল হ্যানিম্যান ২২ বছর বয়সে ১১টি ভাষায় সুপন্ডিত হন, যেমন- জার্মান, গ্রীক, ল্যাটিন, ইংরেজি, ইতালীয়, হিব্রু, সিরিয়ান, আরবি, স্প্যানিশ, ফরাসি ও চ্যাডউইক। মিসেনের টাউন স্কুলে পড়ার সময় তিনি তার নিচের শ্রেনীর শিক্ষার্থীদেরকে গ্রীক ভাষা শেখাতেন। সেন্ট আফ্রা বিদ্যালয় হতে বিদায়ের সময় “মানুষের হাতের অদ্ভুদ গড়ন” শিরোনামে ল্যাটিন ভাষায় প্রবন্ধ লেখেন। লিপজিকে পড়ার সময় রাতে ধনী গ্রীক সন্তানদেরকে জার্মান ও ফ্রেঞ্চ ভাষা শেখাতেন।

তিনি একজন নামকরা অনুবাদক ছিলেন। বিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা বিজ্ঞান, কৃষিবিদ্যা, দর্শন, সাধারণ সাহিত্যকর্ম বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন ভাষা হতে জার্মান ভাষায় অসংখ্য বইপত্র অনুবাদ করেন। যেমন-

(১) ইংরেজি ভাষা হতে ১৫ টি বইয়ের মোট ২১ খন্ড (১৭৭৭-১৮০০),
(২) ফ্রেঞ্চ বা ফরাসি ভাষা হতে ৬ টি বইয়ের মোট ৯টি খন্ড (১৭৮৪-১৭৯৬),
(৩) ইতালীয় ভাষা হতে ১ টি (১৭৯০) ও
(৪) ল্যাটিন হতে ১ টি বই (১৮০৬)।

তার এ অসাধারণ ভাষাজ্ঞান ও অনুবাদ-কর্ম পরবর্তী কালে নিজের অসংখ্য লেখার উপর প্রভাব বিস্তার করেছিল। নিজেও তা থেকে ব্যাপক জ্ঞান লাভ করেন। এমনকি ১৭৯০ সালে উইলিয়াম কুলেন (১৭১০-১৭৯০) এর ইংরেজি লেখা “ এ টিয়েটাইজ অব মেটেরিয়া মেডিকা” এর দ্বিতীয় খন্ড অনুবাদ কালে তিনি হোমিওপ্যাথির আরোগ্য নীতি “লাইক কিউর লাইক” আবিষ্কার করেন। তিনি ১৮০৪ সালে দেশাউতে অবস্থানকালে প্রচলিত অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা সেবা প্রদান হতে বিরত থাকেন এবং কেবল মাত্র লেখার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। “ এই সকল অজানা চিকিৎসা পদ্ধতি দ্বারা আমার রোগভোগকারী ভাইদেরকে চিকিৎসা করতে আমার বিবেক আমাকে সহজেই অনুমোদন দেয় না। চিন্তাধারা এমনদিকে যাচ্ছিল যেন আমি একজন অনিষ্টকারী খুনি অথবা মানুষের অমঙ্গলসাধক, সুতরাং আমি আমার বিয়ের প্রথম বছরেই এই ভয়ানক চিকিৎসা পদ্ধতি ছেড়েই দেই এবং নিজেকে রসায়ন শাস্ত্র ও অনুবাদকের কাজে নিয়োজিত করি”। এছাড়া ১৭৭৯ সাল থেকে ১৮৪৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ভাষায় অসংখ্য মৌলিক রচনাদি, বই পত্র, পত্রিকায় প্রবন্ধ রচনা করেন।

পরিবার পরিজনঃ
প্রথম স্ত্রী জোহনা হেনরিয়েটি লিওপোলডিনি কুসলার যাকে হ্যানিম্যান ২৮ বছর বয়সে বিবাহ করেন, তখন জোহনা হেনটিয়েটির বয়স ছিল ১৯ বছর, ১৭৮২ সালের ১৭ নভেম্বর তাদের বিয়ে হয়। এঁর গর্ভে হ্যানিম্যানের ৯ কন্যা ও ২ পুত্রের জন্ম হয়।

দ্বিতীয় স্ত্রী মাদাম মেরী মেলানী ডি. হারভিলী হ্যানিম্যান ৮০বছর বয়সে বিবাহ করেন, তখন ম্যালানী ডি. হারভিলীর বয়স ছিল ৩২ বছর, ১৮৩৫ সালের ১৮ জানুয়ারী তাদের বিয়ে হয়। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সুন্দরী, ধনবতী, বিশিষ্ট চিত্রকর ও নামকরা কবি। হ্যানিম্যানের জীবনের চরম সাফল্যের দিনগুলিতে তিনি সুযোগ্য সহধর্মিণী হিসেবে যথেষ্ট অবদান রাখেন। শেষ জীবনে তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সেবা প্রদান করতেন।

মৃত্যুঃ
হ্যানিম্যান ১৮৪৩ সালের ২ জুলাই রোববার ভোর ৫ ঘটিকার সময় প্যারিসে নিজের ঘরে মৃত্যুবরণ করেন। জীবনের শেষ বিশ বছর তিনি প্রতি বসন্তে শ্বাস নালীর সর্দি (Bronchial Catarrh)রোগে আক্রান্ত হতেন। জীবনের শেষ মূহুর্তে ১৩ ঘণ্টা ধরে ক্রমান্বয়ে শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়ে শ্বাস রোধ হয়ে তার মৃত্যু ঘটে। ১৮৪৩ সালে প্যারিসের মন্টমার্টরী পর্বতের সমাধিক্ষেত্রে তাকে সমাহিত করা হয়। পরবর্তীতে ৫৫ বছর পর ১৮৯৪ সালে তাকে খ্রিষ্টান মতে পিয়ের ল্যাসেইসি সিমেটেরিতে দাফন ও বিভিন্ন স্থানে মুর্তিসহ ৯টি স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয়।

x
হ্যানিম্যানের রচনাবলীঃ
হ্যানিম্যানের বই সমূহঃ
১) ফ্রাগমেন্ট দ্য ভিরিবাস মেডিকামেন্টোরাম পজিটিভিজ সিভ ইন স্যানোকর্পোরি হিউম্যানো অবজার্ভেটিস -১৮০৫.
২)অর্গানন অব আর্ট অব হেলিং -১৮১০.
৩) মেটেরিয়া মেডিকা পিউরা-১৮১১.
৪) রেপার্টরিয়াম -১৮১৭.
৫) ক্রণিক ডিজিজেস, দেয়ার পিকিউলিয়ার নেচার এন্ড হোমিওপ্যাথিক কিউর -১৮২৮.
৬) স্ক্রফিউলা ক্ষত ও এর চিকিৎসা
৭) যৌন রোগে সার্জনদের প্রতি নির্দেশনা -১৭৮৯.

হ্যানিম্যানের প্রবন্ধ সমূহঃ
১) ডা. ক্রেব এর চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণা -১৭৮১.
২) পুরাতন ক্ষত ও আলসার রোগের নির্দেশনা -১৭৮৪.
৩) চিকিৎসা বিদ্যার পুনর্জন্মের প্রয়োজন
৪) আর্সেনিকের বিষক্রিয়া, এর চিকিৎসা ও বিচার বিভাগীয় সত্য উদ্‌ঘাটন -১৭৮৬.
৫) পিত্ত ও পিত্তপাথুরী
৬) পচন নিরোধক একটা অসাধারণ শক্তিশালী ঔষধ -১৭৮৮.
৭) স্বাস্থের বন্ধু-১৭৮৯.

এছাড়াও যা উল্লেখ যোগ্যঃ
১) ঔষধ প্রুভিং রিপোর্টের ওপর লেখা ১০ খন্ড বই।
২) রসায়ন ও চিকিৎসা বিদ্যার ওপর লেখা ৭০টি মৌলিক রচনা।
৩) ২৪ জন লেখকের ইংরেজি, ল্যাটিন, ফরাসি ও ইতালীয় ভাষার লেখা থেকে জার্মান ভাষায় অনূদিত ২৩ খানা বইয়ের সর্বমোট ৩২ খন্ড রচনা সম্ভার।
৪) রোগীর কেস রেকর্ড বই-৫৪ টি।


শিক্ষক হিসাবে স্যামুয়েল হ্যানিম্যান
ছাত্র জীবনের হ্যানিম্যান বিভিন্ন ভাষা শেখানের শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করার পর, হোমিওপ্যাথি শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের জন্য হোমিওপ্যাথি হাসপাতালের সংলগ্ন কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তবে তা সফল হয় নি। ১৮১১ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি ৬ মাস ব্যাপী শিক্ষা কোর্সের জন্য এক বিজ্ঞপ্তি দেন কিন্তু তা ছাত্রদের উৎসাহের অভাবে কার্যকর হয় নি। অতঃপর ১৮১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হতে ১৮২১ সাল পর্যন্ত লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর ছয় মাস ধরে হোমিওপ্যাথি বিষয়ে lecture দিতেন। প্রত্যেক শনি ও বুধবার বিকাল ২টা হতে ৩টা পর্যন্ত এ ক্লাশ চলত। তার এ ক্লাশে ছাত্র, চিকিৎসক, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী, যুবক, বৃদ্ধ প্রভৃতি ধরনের লোকের সমাবেশ ঘটে।


রসায়নবিদ ও ঔষধ প্রস্তুতকারকঃ
রসায়নবিদ হিসেবে হ্যানিম্যানের সুখ্যাতি ছিল। তিনি সর্ব প্রথম পারদ এর শক্তিকরণ (Dynamization) ও ব্যবহার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। হ্যানিম্যান এ সমন্ধে অনেক প্রবন্ধ ও বই রচনা করেন। অনেক বই অনুবাদও করেন। তার এসব অবদানের জন্য ক্রেল, গটলিং, স্কিরার, টম্স ডর্ফ, ক্রাউস, গমেলিন প্রমূখ বিখ্যাত প্রফেসর ও প্রখ্যাত রসায়নবিদ বার্জেলিয়াস ভূয়সী প্রশংসা করেন। হ্যানিম্যান শুধু রসায়নবিদই ছিলেন না, তিনি নিজেই ঔষধ আবিষ্কার, প্রস্তুত ও রোগীদেরকে প্রয়োগ করতেন। কিন্তু এ নতুন ঔষধ প্রস্তুত ও প্রচলন এবং একজন চিকিৎসক হয়ে নিজের ঔষধ নিজে প্রস্তুত করায় লিপজিকের অ্যালোপ্যাথি ঔষধ প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতারা হ্যানিম্যানের চরম বিরোধিতা করেন। এমনকি তাকে লিপজিগ থেকে তাড়ানোর চেষ্টা করেন।

x
অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসকঃ
হ্যানিম্যান তার পূর্বের আড়াই হাজার বছরের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস অধ্যয়ণ ও পর্যালোচনা করেন। তিনি ১৭৭৮-১৭৭৯ সাল পর্যন্ত ছাত্র অবস্থাতেই ট্রানসেলভেনিয়ার গভর্নরের পারিবারিক চিকিৎসক ছিলেন। এছাড়া এসময় বাইরের রোগীও দেখতেন। কিন্তু এম.ডি ডিগ্রীধারী চিকিৎসক হিসেবে ১৭৮১ সালে তাম্রখনি অঞ্চল হিসেবে খ্যাত ম্যান্সফিল্ড রাজ্যের হেটস্টেড শহরে সর্বপ্রথম চিকিৎসা পেশা শুরু করেন। ১৭৮১ সালের শেষ দিকে তিনি ম্যাগডিবার্গের নিকটবর্তী গোমেরন এ জেলা মেডিকেল অফিসার নিযুক্ত হন। এসময় তিনি প্রচলিত অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার কুফল ও অসারতা উপলব্ধি করে তার বিভিন্ন প্রবন্ধ ও বইতে এ বিষয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু করেন। যেমন প্রবন্ধ ডা. ক্রেব এর “চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণা” (১৭৮১),“ পুরাতন ক্ষত ও আলসার রোগের নির্দেশনা” (১৭৮৪), “চিকিৎসা বিদ্যার পুনর্জন্মের প্রয়োজন” ও বই “ স্ক্রফিউলা ক্ষত ও এর চিকিৎসা”। ১৭৮৫ সালে তিনি ড্রেসড্রেনে আসেন এবং ১ বছর শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করেন ও চিকিৎসা আইনবিদ্যায় দক্ষতা অর্জন করেন। এসময় তিনি “আর্সেনিকের বিষক্রিয়া, এর চিকিৎসা ও বিচার বিভাগীয় সত্য উদ্‌ঘাটন” (১৭৮৬); “পিত্ত ও পিত্তপাথুরী” এবং “পচন নিরোধক একটা অসাধারণ শক্তিশালী ঔষধ” (১৭৮৮) নামে কয়েকটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। ১৭৮৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তিন লিপজিকে চিকিৎসা শুরু করেন। এসময় তার “ যৌন রোগে সার্জনদের প্রতি নির্দেশনা” (১৭৮৯) পুস্তিকা প্রকাশ পায়। ১৭৮৯ সালে “স্বাস্থের বন্ধু” বইতে স্বাস্থ বিধি ও জলাতংক রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন এবং “সিফিলিস প্রসংগে” প্রবন্ধে সিফিলিসে পারদের সূক্ষ্মমাত্রা ব্যবহারের নির্দেশ দেন।


হোমিওপ্যাথি আবিষ্কার ও চিকিৎসকঃ
হ্যানিম্যান তার সময়ের প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি বিরূপ ছিলেন এবং ঐ চিকিৎসার উদ্দেশ্য তাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছিল। তিনি দাবি করলেন যে তাকে যে ঔষধ সম্পর্কে শেখানো হয়েছে তা রোগীর ভালর চেয়ে বেশি ক্ষতিকর।

“এই সকল অজানা চিকিৎসা পদ্ধতি দ্বারা আমার রোগভোগকারী ভাইদেরকে চিকিৎসা করতে আমার বিবেক আমাকে সহজেই অনুমোদন দেয় না। চিন্তাধারা এমনদিকে যাচ্ছিল যেন আমি একজন অনিষ্টকারী খুনি অথবা মানুষের অমঙ্গলসাধক, সুতরাং আমি আমার বিয়ের প্রথম বছরেই এই ভয়ানক চিকিৎসা পদ্ধতি ছেড়ে দেই এবং নিজেকে রসায়নশাস্ত্র ও অনুবাদকের কাজে নিয়োজিত করি”

১৭৮৪ সালের দিকে চিকিৎসা পেশা ছেড়ে দেবার পর হ্যানিম্যান লেখনী ও অনুবাদকের কাজ করে কষ্টেসৃষ্টে তার জীবন নির্বাহ এবং পাশাপাশি বিভিন্ন ঔষধে বর্ণিত চিকিৎসাগত অসঙ্গতি বের করার কাজও করেন। উইলিয়াম কুলেন এর “এ ট্রিয়েট্রাইজ অন মেটেরিয়া মেডিকা” (A Treatise on the Materia Medica) বইটি অনুবাদ করার সময় হ্যানিম্যান পেরুভিয়ান বার্ক থেকে তৈরী ম্যালেরিয়া (malaria) জ্বরের জন্য “সিঙ্কোনা” (cinchona) নামক গাছের ছালের কার্যকারিতা দেখতে পান। হ্যানিম্যান বিশ্বাস করলেন যে ম্যালেরিয়া জ্বরে সিঙ্কোনা’র মত অন্যান্য সহায়ক উপাদান (astringent substances) ততটা কার্যকরী নয় এবং তাই তিনি “সিঙ্কোনা” (cinchona) গাছের বাকল এর কার্যকারীতা নিজদেহে পরীক্ষা করা শুরু করলেন, দেখলেন যে এটা ম্যালেরিয়ার মত তার দেহে কম্পজ্বর উৎপন্ন করছে এবং এটা যে কোন সুস্থ দেহেই করতে সক্ষম। এ বিষয়টি তাকে একটি মৌলিক নীতির দিকে ধাবিত করে “ যা একজন সুস্থ ব্যক্তির উপর প্রয়োগের ফলে বিভিন্ন লক্ষণ সমষ্টির উৎপন্ন করতে পারে, তা একই রকম লক্ষন সমষ্টি সমৃদ্ধ অসুস্থ দেহে প্রয়োগ করলে নিরাময় করতে সক্ষম” এটাই “লাইক কিউর লাইক” (like cures like) যা একটি নতুন ধারার চিকিৎসা পদ্ধতির প্রচেষ্টা এবং তিনি এর নাম দেন হোমিওপ্যাথি। ১৮০৭ সালে হুফেলান্ড (Hufeland) জার্নাল এ প্রকাশিত ইন্ডিকেশনস অব দ্যা হোমিওপ্যাথিক ইমপ্লয়মেন্ট অব মেডিসিনেস ইন অর্ডিনারি প্র্যাকটিস (Indications of the Homeopathic Employment of Medicines in Ordinary Practice) নামে এক প্রবন্ধে প্রথম “ হোমিওপ্যাথি” (homeopathy) শব্দটি হ্যানিম্যান প্রথম ব্যবহার করেন। “২৫০০ বছরের চিকিৎসা ইতিহাসে শুধুমাত্র আলব্রেচ ফন হেলারই বুঝতে পেরেছিলেন যে এটাই প্রাকৃতিক পদ্ধতি, অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং সঠিক ঔষধ প্রয়োগ পদ্ধতি যা মানুষের সঠিক স্বাস্থের উপর প্রভাব ফেলে এবং আমি তার পরবর্তী ব্যক্তি যে আবার এই প্রাকৃতিক পদ্ধতি চালু করলাম”। হ্যানিম্যান পুরাতন চিকিৎসা পদ্ধতি অ্যালোপ্যাথিকে ওল্ড স্কুল এর চিকিৎসা পদ্ধতি বলে অভিহিত করতেন। তিনি ১৭৯২ সালে টুরিংগেন জংগলে জর্জেন্থল এর পাগলা গারদের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এখানে হ্যানিম্যান হ্যানোভার মন্ত্রী ক্লকেন ব্রিং এর বিষাদ উন্মাদ চিকিৎসা করেন। এ সময় তিনি রক্তমোক্ষণকারী চিকিৎসা ব্যবস্থা ও মানসিক রোগীর চিকিৎসার নির্যাতনমূলক পদ্ধতির তীব্র সমালোচনা করেন।

কিভাবে হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথি আবিষ্কার করেন ?
হোমিওপ্যাথি একটি বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি ১৭৯৬ সালে জার্মান চিকিৎসক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান আবিষ্কার করেন। হোমিওপ্যাথ নামে পরিচিত এর চিকিৎসকরা বিশ্বাস করেন যে পদার্থ সুস্থ মানুষের মধ্যে একটি রোগের উপসর্গ সৃষ্টি করে সেই একই পদার্থ অসুস্থ মানুষের মধ্যে একই ধরনের উপসর্গ নিরাময় করতে পারে; এই মতবাদকে বলা হয় সিমিলিয়া সিমিলিবাস কিউরেন্টার, বা “সদৃশ সদৃশকে আরোগ্য করে”।

হ্যানিম্যান আঠারো শতকের শেষের দিকে মূলধারার ঔষধগুলো অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য হিসাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন কারণ এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অকার্যকর এবং প্রায়শই ক্ষতিকারক ছিল।

আমি বৃথা জীবন ধারণ করিনি, সমস্ত কিছুই প্রমাণ করব, যা ভাল তা শক্ত করে ধরব’।


হোমিওপ্যাথির উন্নয়নঃ
১৮০১ সালে আরক্তজারের প্রতিষেধক হিসেবে তিনি “ বেলেডোনা” ব্যবহারের উপদেশ দেন। প্রুশিয়া সরকার এটা সব চিকিৎসক কে ব্যবহার করতে নির্দেশ দেন। এছাড়াও হ্যানিম্যান ১৮১৩ সালে জার্মানিতে টাইফাস ও হসপিটাল জারে যথাক্রমে “ব্রায়োনিয়া” ও “রাসটক্স” ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

তিনি হোমিওপ্যাথির উন্নয়নে যে সকল পদ্ধতি প্রচলন করেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-
১) পরীক্ষামূলক ও আরোগ্যকারী সদৃশবিধানে প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি (সিমিলিয়া-সিমিলিবাস-কিউরেন্টার),
২) সুস্থ মানব দেহে ঔষধ পরীক্ষা করে ঔষধের কার্যকরী ক্ষমতা নির্ধারণ,
৩) চিকিৎসা ক্ষেত্রে জীবনীশক্তি তত্ত্বের আবিষ্কার ,
৪) রোগ সংক্রমণ তত্ত্ব ও কলেরার কারণ প্রসংঙ্গে জীবাণুতত্ত্বের পূর্বাভাষ
৫) চির বা স্থায়ী রোগ তত্ত্ব,
৬) অপরাধ তত্ত্ব ও অপরাধ প্রবণতা,
৭) রোগীর পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা পদ্ধতি,
৮) মানসিক রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি ও নির্যাতনমূলক চিকিৎসার বিরোধিতা,
৯) ঔষধের শক্তিকরণ ও নতুন শক্তিকরণ পদ্ধতি (৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতি),
১০) ঔষধকে শক্তিকৃত ও অবিমিশ্রিত অবস্থায় সূক্ষ্ম পরিবর্তিত মাত্রায় প্রয়োগ,
১১) পথ্যবিজ্ঞানে নির্দিষ্ট নিয়মনীতি- খাদ্যতত্ত্ব ও পথ্যাপথ্যেও প্রয়োজনীয়তা,
১২) স্বাস্থ্যতত্ত্ব ও নাগরিক স্বাস্থ্য – পাগলাগারদ, এতিমখানা ও জেলের স্বাস্থ্যবিধির দুর্দশা এবং ব্যয়াম সহ স্বাস্থ রক্ষার নিয়মাবলী,
১৩) সার্জারিতে ড্রাই ড্রেসিং ও অস্থি চাঁচন পদ্ধতি,
১৪) পারদকে দ্রবীভূত করা ও এর সূক্ষ্ম উগ্রতাবিহীন প্রস্তুতি ও সফল ব্যবহার, আর্সেনিকের ক্রিয়া প্রসংগ ও চিকিৎসা আইনে রাসায়নের অবদান, মদে ভেজাল নির্ধারণ পদ্ধতি, বিষের ব্যবহার ও সংরক্ষণ বিধি, ব্যবস্থাপত্রের বিধি, ভেষজের জলীয় অংশ নিষ্কাশন, বাষ্পীয় পাতন ও তরল মাধ্যমে ভেষজের নির্যাসের বাষ্পীয়ভবন, টাটকা গাছ থেকে আরক তৈরী, ইত্যাদি। তিনি রোগ ও ঔষধের লাক্ষণিক উৎস আবিষ্কার করে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করেন।


হ্যানিম্যানের ধারণাঃ
স্যামুয়েল হ্যানিম্যান স্মৃতিস্তম্ভ, ওয়াশিংটন ডিসি, “সিমিলিয়া সিমিলিবাস কিউরেন্টার” সদৃশ্য সদৃশ্যকে আরোগ্য করবে। “হোমিওপ্যাথি” শব্দটি হ্যানিম্যান তৈরি করেছিলেন এবং ১৮০৭ সালে প্রথম মুদ্রণে প্রকাশিত হয়েছিল।

স্কটিশ চিকিৎসক এবং রসায়নবিদ উইলিয়াম কুলেনের জার্মান ভাষায় একটি মেডিকেল গ্রন্থ অনুবাদ করার সময় হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে ধারণা করেছিলেন। ম্যালেরিয়া নিরাময়ের জন্য সিনকোনার ব্যবহার সম্পর্কিত কুলেনের তত্ত্ব সম্পর্কে সন্দেহাতীত হলেন, হ্যানিম্যান কী ঘটবে তা খতিয়ে দেখার জন্য বিশেষভাবে কিছু ছাল খেয়েছিলেন। তিনি জ্বর, কাঁপুনি এবং জয়েন্টে ব্যথা অনুভব করেছেন: ম্যালেরিয়ার মতোই লক্ষণগুলি। এ থেকে হ্যানিম্যান বিশ্বাস করেছিলেন, যে সমস্ত কার্যকর ওষুধগুলি থেকে চিকিৎসা করা হয়, সেগুলোই রোগগুলির মতো সুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে লক্ষণ তৈরি করে, প্রাচীন চিকিৎসকদের প্রস্তাবিত “সাদৃশ্য বিধান” অনুসারে।


ঔষধ Proving:
হ্যানিম্যান পরীক্ষা করতে শুরু করেছিলেন যে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন পদার্থ কী কী প্রভাব ফেলতে পারে, এটি একটি পদ্ধতি যা পরে “হোমিওপ্যাথিক প্রুভিং” নামে পরিচিত। তিনি ১৮০৫ সালে প্রুভিং এর একটি সংগ্রহ প্রকাশ করেন এবং ৬৫টি প্রস্তুতির একটি দ্বিতীয় সংকলন তাঁর বই, মেটেরিয়া মেডিকা পিউরা-এ প্রকাশিত হয়।

যেহেতু হ্যানিম্যান বিশ্বাস করতেন যে ওষুধের বড় মাত্রা যা একই ধরনের উপসর্গ সৃষ্টি করে তা কেবল অসুস্থতা বাড়িয়ে তুলবে, তিনি চরম সূক্ষ্ম হওয়ার পক্ষে সমর্থন করেছিলেন। সূক্ষ্ম করার জন্য একটি কৌশল তৈরি করা হয়েছিল যা হ্যানিম্যান দাবি করেছিলেন যে পদার্থের থেরাপিউটিক বৈশিষ্ট্যগুলি সংরক্ষণ করবে এবং এর ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি দূর করবে৷ হ্যানিম্যান বিশ্বাস করতেন যে এই প্রক্রিয়াটি “অশোধিত পদার্থের আত্মার মতো ঔষধি শক্তি” বৃদ্ধি করেছে। তিনি তার নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ সংগ্রহ করেন এবং প্রকাশ করেন, দ্যা অর্গানন অফ দ্যা হিলিং আর্ট (১৮১০), ১৯২১ সালে প্রকাশিত ষষ্ঠ সংস্করণ যা আজও হোমিওপ্যাথরা ব্যবহার করে


মায়াজম এবং রোগঃ
অর্গানন -এ, হ্যানিম্যান “মায়াজম” -এর ধারণাকে “সংক্রামক নীতি” হিসেবে অন্তর্নিহিত দীর্ঘস্থায়ী রোগ এবং “অত্যাবশ্যক শক্তির অদ্ভুত রোগবিকৃতিগুলি” হিসাবে। হ্যানিম্যান প্রতিটি মায়াজমকে নির্দিষ্ট রোগের সাথে যুক্ত করতেন এবং মনে করতেন যে মায়াজমের প্রাথমিক সংস্পর্শে স্থানীয় উপসর্গ সৃষ্টি করে, যেমন ত্বক বা যৌনরোগ।

মায়াজমের জন্য হ্যানিম্যানের হাইপোথেসিস মূলত তিনটি স্থানীয় উপসর্গ উপস্থাপন করেছিল: সোরা (চুলকানি), সিফিলিস (ভেনেরিয়াল রোগ) বা সাইকোসিস (ডুমুর-ওয়ার্ট ডিজিজ)। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সোরা, যা ত্বকের যেকোনো চুলকানি রোগের সাথে সম্পর্কিত বলে বর্ণনা করা হয়েছিল এবং এটির ভিত্তি বলে দাবি করা হয়েছিল। আরও অনেক রোগের অবস্থা। হ্যানিম্যান বিশ্বাস করতেন যে এটি মৃগী, ক্যান্সার, জন্ডিস, বধিরতা, এবং ছানি এর মতো রোগের কারণ হতে পারে। হ্যানিম্যানের সময় থেকে, অন্যান্য মায়াজম প্রস্তাব করা হয়েছে, কিছু অসুস্থতা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে যা পূর্বে সোরাকে দায়ী করা হয়েছিল, যার মধ্যে যক্ষ্মা এবং ক্যান্সার মায়াসম রয়েছে।

কার্যকারিতাঃ
সদৃশ ওষুধ কীভাবে আমাদের দেহে কাজ করে? এই প্রশ্নটা বহুদিনের। উত্তরের সঙ্গে সদৃশ নীতির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে। প্রথমে আমাদের জানা দরকার

জীবনী শক্তির কাজঃ
মানব দেহে সংঘটিত সব কাজের ক্ষমতার উৎস হলো জীবনী শক্তি (ভাইটাল ফোর্স)। জৈবদেহ জীবনী শক্তির ক্ষমতাবলে ভাইটাল ফোর্স প্রয়োগ করে নিদিষ্ট নিয়মকানুন বা সূত্র অনুসারে সুস্থ, অসুস্থ ও আরোগ্যের সময় যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে।

কীভাবে কাজ করে?
ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান বলেছেন, হোমিওপ্যাথিক ওষুধ স্নায়ুর মাধ্যমে কাজ করে। ওষুধ যাতে বেশিসংখ্যক স্নায়ুকে স্পর্শ করে ভালোভাবে কাজ করতে পারে, এ জন্য ওষুধের একটা অনুবটিকাকে পানিতে দ্রবীভূত করে প্রয়োগ করতে হবে। জিহ্বা, মুখ ও পাকস্থলির স্নায়ুগুলো সহজেই ওষুধের ক্রিয়া গ্রহণ করতে পারে। নাকে ও শ্বাসযন্ত্র দিয়ে ঘ্রাণ এবং মুখ দিয়ে আঘ্রাণ নিলেই সংশ্লিষ্ট আবরণীর ওপরের স্নায়ুও এ কাজে সাহায্য করতে পারে, বিশেষত একই ওষুধ যদি মর্দনের সঙ্গে সঙ্গে অভ্যন্তরীণভাবেও প্রয়োগ করা হয়।

ওষুধের কাজঃ
ডা. হ্যানিম্যান তার বিশ্বখ্যাত অর্গানন অব মেডিসিন পুস্তকে উল্লেখ করেছেন, হোমিওপ্যাথিক ওষুধের কাজ দুই ধরনের (১) রোগ সৃষ্টি করা ও (২) রোগ আরোগ্য করা।

তিনি তার নিজের ও ৫০ জন সহকর্মীর সুস্থ দেহে প্রায় ১০০টি ওষুধ স্থূলমাত্রায় বার বার প্রয়োগ করে পরীক্ষণ করেন। তখন এসব ওষুধের লক্ষণ তাদের ওপর প্রকাশ পায়। লক্ষণগুলো সংগ্রহ করে হোমিওপ্যাথিক মেটিরিয়া মেডিকায় এবং রেপার্টারি গ্রন্থে লিখে রাখেন। যাতে চিকিৎসার সময় এগুলো ব্যবহার করা যায়। রোগ সৃষ্টিকারী এসব পরীক্ষার সময় ওষুধ সেবনের ফলে ওষুধ মুখ গহ্বরের স্নায়ুকে স্পর্শ করে এর অনুভূতিতে মস্তিকে পৌঁছে দেয়। সেখান থেকে এর ক্রিয়ার অনুভূতি মন ও দেহে ওষুধগুলোর নির্দিষ্ট ক্রিয়াক্ষেত্রে পৌঁছে যায় এবং শরীর ও মনে ওষুধের নিজ নিজ লক্ষণ প্রকাশ করে। এ ক্ষেত্রে সুস্থদেহ জীবনী শক্তির ক্ষমতাবলে জীবনীবল প্রয়োগ করে জীবনী সূত্র মোতাবেক এ কাজ সম্পন্ন করে। পরবর্তী সময়ে গবেষকরা তার পরীক্ষণ করা অনেক ওষুধ দ্বিও-অদ্ধ পদ্ধতিতে পরীক্ষণ করে এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তির প্রমাণ পান।

রোগ আরোগ্য করাঃ
অপরদিকে রোগী চিকিৎসার সময় হ্যানিম্যান রোগীর রোগ লক্ষণের সদৃশ লক্ষণ সম্পন্ন ওষুধ সূক্ষ মাত্রায় প্রয়োগ করে রোগীকে আরোগ্যর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ১৭৯০ সালে আবিষ্কৃত তার এ চিকিৎসা পদ্ধতির নাম হোমিওপ্যাথি । তিনি আরো প্রমাণ করেন যেকোনো ওষুধ সুস্থ মানুষের ওপর যে রোগ লক্ষণ সৃষ্টি করে তা সৃদশ লক্ষণের রোগীকে আরোগ্য করতে পারে। অর্থাৎ ওষুধের রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষমতার মাধ্যমেই এর রোগ আরোগ্যকারী ক্ষমতা নিহিত। একইভাবে অন্য এক গবেষণায় ৪০ জন মাথা ঘোরা রোগীর ওপর গবেষক ক্লোজেন, বার্গম্যান ও বাটিলি এ রোগীদের লক্ষণানুসারে ককুলাস, কোনিয়াম ও পেট্টোশিয়াম ওষুধ দিয়ে পরীক্ষা করে সফল হন।

উপসংহারঃ
অতএব, মহাত্মা হ্যানিম্যান ও তার পরবর্তী গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে হোমিওপ্যাথি ওষুধ স্নায়ুর মাধ্যমে কাজ করে। এ ক্ষেত্রে জীবনীশক্তি জীবের সব ক্ষমতার উৎস এটা উপলব্ধি করে হোমিওপ্যাথিকে চিকিৎসাক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গভাবে যতই ব্যবহার করা যাবে জনস্বাস্থ্যের ততই উন্নতি হবে।
x

→ রোগ নিরাময়ের প্রাকৃতিক নিয়ম Simila Similibus Curantur এর বাক্যগত অর্থ Let like be cured by like অর্থাৎ সদৃশ রোগ সৃজনক্ষম ঔষধ দিয়াই রোগ আরোগ্য সম্ভব।


ডাঃ হার্বাট. এ. রবার্টস এর মতে = আরোগ্যের যে বিজ্ঞান ও কলা প্রকৃতির মৌলিক নিয়ম নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত, তাকেই হোমিওপ্যাথি বলে।

এছাড়া খুব সহজে বলতে গেলে বলাযায় = সদৃশ লক্ষন ভিত্তিক আরোগ্য পদ্ধতিকে হোমিওপ্যাথি বলে।

★হোমিওপ্যাথি নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্রের উপর বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত।

নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্র হচ্ছে : ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সমান ও বিপরীত’ বা প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।

ইংরেজি HOMOEOPATHY শব্দটি গ্রিক শব্দ Homoeo রা Homoeoios এবং pathy বা pathos হইতে উৎপন্ন হইয়াছে। গ্রিক ভাষায় হোমিও মানে সদৃশ, like,similarএবং pathos মানে উপায়, পদ্ধতি বা কষ্টভোগ Means, Method or Suffering। অভিধানিক অর্থে হোমিওপ্যাথি অর্থ হইল সদৃশ রোগ বা সদৃশ দুর্ভোগ।

রোগ নিরাময়ের প্রাকৃতিক নিয়ম Simila Similibus Curantur এর বাক্যগত অর্থ Let like be cured by like অর্থাৎ সদৃশ রোগ সৃজনক্ষম ঔষধ দিয়াই রোগ আরোগ্য সম্ভব। হোমিওপ্যাথি একটি সুসংগঠিত নিয়মতান্ত্রিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং আরোগ্য কলা। যে চিকিৎসা বিজ্ঞানের মূল সূত্র হইতেছে সুস্থবস্থয় কোন ঔষধ স্থুল মাত্রায় সেবন করিলে মানুষের দেহ ও মনে যে সকল অসুস্থকর লক্ষন প্রকাশ পায়, ঐ প্রকার লক্ষনযুক্ত প্রাকৃতিক অসুস্থতায় উক্ত ঔষধের শক্তিকৃত সূক্ষ্মমাত্রা প্রয়োগে লক্ষণসমূহ অন্তর্হিত হয়।

হোমিওপ্যাথির সংজ্ঞায় বলা যায় “প্রাকৃতিক রোগের দ্বারা সৃষ্ট মানব শরীরের বিকৃত লক্ষণসমষ্টি দ্বারা অংকিত প্রতিচ্ছবির ন্যায় সুস্থ দেহে পরীক্ষিত অনুরুপ প্রতিচ্ছবি সৃষ্টি করিতে সক্ষম শক্তিকৃত ঔষধের একবার একটিমাত্র ঔষধ প্রয়োগ ব্যবস্থাকে হোমিওপ্যাথি বলে।

হোমিওপ্যাথির উপর মনীষীদের বিভিন্ন সংজ্ঞাঃ
♦ডা: বোরিকের মতে সদৃশ লক্ষণ ভিত্তিক আরোগ্য পদ্ধতিকে হোমিওপ্যাথি বলে।
♦ডা: এলেনের মতে হোমিওপ্যাথি সদৃশ বিধানভিত্তিক একটি নিয়নভিত্তিক চিকিৎসা।
♦ডাঃ এ, ডাইট স্মিথ বলেন, হোমিওপ্যাথি একটি বিশেষ আরোগ্য বিজ্ঞান।
♦ডাঃ স্যামুয়েল ফ্রেডারিক হ্যানিম্যান যাহার বিকাশ সাধন করেছেন এবং যা আরোগ্যের বৈজ্ঞানিক ও প্রাকৃতিক নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত।
♦ডাঃ হাবাট এ. রবার্টস এর মতে আরোগ্যের যে বিজ্ঞান ও কলা প্রকৃতির মৌলিক নিয়ম নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত, তাকেই হোমিওপ্যাথি বলে।

চিকিৎসার গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করিবার পূর্বে চিকিৎসকের কি কি বিষয়ে গুণ ও জ্ঞান থাকিতে হইবে তাহা নিম্নে আলোচিত হইলঃ
১. রোগ সম্বন্ধে জ্ঞান।
২. ঔষধের আরোগ্যকারী শক্তি সম্বন্ধে জ্ঞান।
৩. ঔষধ প্রয়োগ সম্পর্কিত জ্ঞান।
৪. আরোগ্যের বিঘ্ন দূর করার জ্ঞান।
৫. রোগের গতিধারা, অবস্থা, পরিণতি সম্পর্কিত জ্ঞান।
৬. মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের অবস্থান, তাহাদের ক্রিয়া ও পরস্পরের সম্পর্কে জ্ঞান।

আদর্শ আরোগ্য বলিতে কি বুঝ?
হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান বলেছেন- “আরোগ্যের সবচেয়ে উত্তম আদর্শ হচ্ছে – “সহজবোধ্য ও সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতির উপর ভিত্তি করে সবচেয়ে নির্ভ রযোগ্য উপায়ে, রোগীর ক্ষতি না করে দ্রুত, মৃদু, ও স্থায়ীভাবে রোগের সম্পূর্ণ অপসারণের মাধ্যমে রোগীকে পুনরায় সুস্থাবস্থায় ফিরিয়ে আনা”

১. আরোগ্য হচ্ছে স্বাস্থ্যে প্রত্যাবর্তন যেখানে আক্রান্ত অঙ্গের লক্ষণসমূহই কেবল দূরীভূত হয়না বরং রোগী শারীরিক, মানসিকভাবে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ বোধ করে।
২. আরোগ্য কোন অস্থায়ী ব্যবস্থা নয়; বরং স্থায়ী।
৩. আরোগ্য তাকেই বলে যা মৃদুভাবে সম্পন্ন হয় – রোগীকে কোন প্রকার কষ্ট না দিয়ে বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে।
৪. সহজবোধ্য ও চিরন্তন নীতি বা নিয়মের উপর ভিত্তি করেই আরোগ্য সাধিত হয়।

হোমিওপ্যাথি প্রাকৃতিক ওষুধের একটি ব্যবস্থা যা ১৮ তম শতাব্দীর শেষের দিকে জার্মান চিকিৎসক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান দ্বারা প্রবর্তন ও বিকাশ করা হয়েছিল। অসুস্থতা দেখা দিলে পুরো ব্যক্তি-মন, শরীর, আত্মা-প্রভাবিত হয়ে স্বীকৃতি প্রদান করে হোমিওপ্যাথি সেই পুরো ব্যক্তির চিকিৎসা করার চেষ্টা করে। Focus অসুস্থ অংশ বা অসুস্থতা নয়, বরং ব্যক্তির সামগ্রিকতা। হোমিওপ্যাথিক ওষুধ বা ‘প্রতিকার’ নিরাময় প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য শরীরের স্ব-নিয়ন্ত্রণকারী প্রক্রিয়াগুলিকে উদ্দীপিত করে।


রোগ বলতে কি বুঝায় বা রোগ সম্পর্কে হোমিওপ্যাথিতে কিরূপ ধারনা পোষণ করা হয় ?
জীবনীশক্তির বিকৃত অবস্থাজনিত সৃষ্ট লক্ষণকেই রোগ বলা হয়। অদৃশ্য জীবনীশক্তি মানবদেহে অতি সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থিত। জীবনীশক্তির এই গতি ভিতর হইতে বাহিরের দিকে। কোন ব্যক্তি পীড়িত হইলে আমাদের প্রথম বুঝিতে হইবে জীবনীশক্তির বিপর্যস্ত অবস্থা। রোগশক্তির বিরুদ্ধে সব সময় জীবনীশক্তি যুদ্ধ করিয়া আসিতেছে এবং রোগশক্তিকে প্রতিহত করিয়া জীবন ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখিতেছে। যদি রোগশক্তিটি জীবনীশক্তি অপেক্ষা শক্তিশালী হয় তবে জীবনীশক্তির সুশৃংঙ্খল কর্মকান্ডে বিপর্যয় ঘটিলে সঙ্গে সঙ্গে বাহিরে জানাইয়া দেয়।

প্রাকৃতিক রোগশক্তি সূক্ষ্ম ও অজড়। এই অজড় রোগশক্তির প্রভাবেই অজড় জীবনীশক্তি বিকৃতাবস্থা প্রাপ্ত হইয়া দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে লক্ষণ সমষ্টির সাহায্যে বিশৃঙ্খল অবস্থা প্রকাশ করে। যাহার ফলে মানবের দেহ ও মনের বিকৃত অবস্থা প্রাপ্ত হয়। অনুভূতির বিকৃতি ঘটে ও বিশৃঙ্খল ক্রিয়াকলাপ দেখা দেয়। এই সকল বিকৃত অনুভূতি, বিশৃঙ্খল ক্রিয়াকলাপ অর্থাৎ জীবনীশক্তির বিকৃত অবস্থাজনিত যে সকল লক্ষণ মানবদেহে প্রকাশিত হয় ঐ লক্ষণসমষ্টিকেই হোমিওপ্যাথি রোগ বলা হয়। রোগ সম্পর্কে হোমিওপ্যাথিতে যে ধারণা পোষণ করা হয় তাহা হইল এই যে প্রাকৃতিক রোগ শক্তি সূক্ষ ও অজড়।

লক্ষণ কত প্রকার ও কি কি ?
ব্যক্তিনিষ্ঠ লক্ষণঃ Subjective Symptoms- রোগের যে সকল লক্ষণ শুধুমাএ রোগী স্বয়ং অনুভব করিতে পারেন এবং রোগী না বলিলে চিকিৎসক বা অন্য কেহ তাহা বুঝিতে পারে না উহাদিগকে ব্যক্তিনিষ্ঠ লক্ষণ বলে। যেমন- পিপাসা, মাথাব্যথা, ক্ষুধা, ব্যথা বেদনা প্রভৃতি।

বস্তুনিষ্ঠ লক্ষণঃ Objective Symptoms- রোগের যে সকল লক্ষণ রোগী নিজে না বলিলেও চিকিৎসক তাহার জ্ঞান ইন্দ্রিয়ের দ্বারা ও যান্ত্রিক পরীক্ষার দ্বারা, পার্শ্ববর্তী লোকজন প্রত্যক্ষ করেন উহাদিগকে বস্তুনিষ্ঠ লক্ষণ বলে। যেমন- জ্বর, প্রলাপ, পক্ষাঘাত, কাশি প্রভৃতি।

পূর্ণাঙ্গ রোগ লক্ষণ কাহাকে বলে ?
যে লক্ষণের অবস্থান, অনুভূতি, হ্রাসবৃদ্ধি ও আনুষাঙ্গিক অবস্থা আছে জ্ঞান ইন্দ্রিয় দ্বারা সহজেই বোধগম্য হয় তাহাকে পূণাঙ্গ রোগ লক্ষণ বলে।

প্রকৃত রোগ লক্ষণের বৈশিষ্ট্যসমূহ কি কি ?
প্রকৃত রোগ লক্ষণ রোগীর স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের বিকৃত অবস্থা প্রকাশ করে।
প্রকৃত রোগ লক্ষণ জ্ঞান ইন্দ্রিয় দ্বারা সহজেই বোধগম্য হইবে।
প্রকৃত রোগ লক্ষণের অবস্থান, অনুভূতি, হ্রাসবৃদ্ধি ও আনুষাঙ্গিক অবস্থা স্পষ্টভাবে বুঝা যাইবে।

লক্ষণ ও চিহ্নের মধ্যে পার্থক্য কি ?
চিকিৎসকের নিকট যখন রোগী নিজে রোগ সম্পর্কে বা কষ্টকর উপসর্গ সম্বন্ধে বর্ণনা দেয় তখন রোগীর বর্ণিত কষ্টকর উপসর্গগুলিকে লক্ষণ বলে।

অপরদিকে চিকিৎসক রোগী পর্যবেক্ষণ করিয়া এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা দ্বারা রোগ সম্পর্কে যাহা জানিতে পারেন তাহাকে চিহ্ন বলে। সুতরাং লক্ষণ হইল রোগ সম্পর্কে রোগীর নিজের বর্ণনা, আর চিহ্ন হইল পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ দ্বারা রোগ সম্পর্কে চিকিৎসকের ধারন। অনেক সময় লক্ষণ ও চিহ্ন হইতে পারে। যেমন একজন রোগী বলিল আমার বমির সহিত রক্ত বাহির হয়। এখানে রক্ত বমি একটি লক্ষণ। আবার যদি রোগী চিকিৎসকের সামনে রক্তবমি করে বা চিকিৎসককে রক্তবমি আনিয়া দেখায় তাহা হইলে এখানে রক্তবমি চিহ্ন।

হোমিওপ্যাথিতে রোগের লক্ষণ বলতে কী বোঝায় ?
মেটেরিয়া মেডিকায় বর্ণিত প্রতিটি ওষুধ যেন এক একটি রুগ্ন মানুষের প্রতিচ্ছবি অর্থাৎ স্বতন্ত্র লক্ষণ সমষ্টির একক চিত্র। সুস্থ শরীরে ওষুধ পরীক্ষা করে যেমন ওষুধের লক্ষণ সমষ্টি জানা যায় তেমনি প্রতিটি মানব স্বত্ত্বার অখণ্ডতা বিবেচনায় রেখে সামগ্রিক লক্ষণ নির্ণয় করা হয়। রোগ বা রোগের নাম নয়, লক্ষণ সমষ্টিই ওষুধ নির্বাচনের একমাত্র নিয়ামক।

প্রসঙ্গতঃ অ্যালোপ্যাথিসহ অন্যান্য চিকিৎসাক্ষেত্র এবং সাধারণ মানুষ মানব স্বত্ত্বার অখণ্ডতায় বিশ্বাস করলেও চিকিৎসা ক্ষেত্রে খণ্ডিত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে রোগের বিষয়টি দেখে থাকেন। রোগ যে অঙ্গেই আক্রমণ করুক না কেন, একই স্নায়ুমণ্ডলি ও রক্তস্রোতের অধীনে বলে পুরো মানুষটি রুগ্ন হয়ে থাকে। আধুনিক চিকিৎসায় এই বাস্তবতাকে গ্রহণ করা হয় না।

পক্ষান্তরে, রোগাক্রান্ত অঙ্গটিসহ পুরো মানুষটি রোগগ্রস্ত হয় হোমিওপ্যাথির এই বাস্তব বিশ্বাস এবং সেই নিরিখে দেহ, মন ও অঙ্গকে অবিচ্ছিন্নভাবে রুগ্ন ধরে নিয়ে চিকিৎসা দেয়ার নিয়মই হোমিওপ্যাথিকে অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি থেকে আলাদা করেছে। উদরাময়,আমাশয়, জ্বর, কাশি, নিউমোনিয়া, গলগণ্ড, গলস্টোন, অর্শ, ভগন্দর,টিউমার,র হার্নিয়া, একশিরা, মাথাবেদনা, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, যক্ষ্মা, ক্যানসার প্রভৃতি রোগের নাম যাই হোক না কেন, প্রকৃতপক্ষে পুরো মানুষটিই রুগ্ন হয়। অতএব, রোগ যাই হোক, চিকিৎসা হবে সামগ্রিক- এটাই হবে প্রকৃত সত্য।

হোমিওপ্যাথি সেই সত্যকে সামনে রেখে এর বিশেষ পদ্ধতিতে লক্ষণ সংগ্রহ করে এবং লক্ষণের গুরুত্বের ক্রমানুসারে লক্ষণগুলোকে ভাগ করে নেয়, যথা-
(১) মানসিক লক্ষণ– মন থেকে স্ংগৃহীত লক্ষণ মানসিক শ্রেণির, যেমন-ক্রোধ, হিংসা, অস্থিরতা, মনের ইচ্ছা-অনিচ্ছা ইত্যাদি।
(২) সার্বদৈহিক লক্ষণ– সমগ্র শরীর থেকে সংগৃহীত লক্ষণ হলো সার্বদৈহিক, যেমন- শরীরের উপর আবহাওয়াগত প্রভাব অর্থাৎ শীত, গরম বা বর্ষায় কাতর, গোসলে ইচ্ছা- অনিচ্ছা, ক্ষুধা, পিপাসা প্রভৃতি।
(৩) বিশেষ লক্ষণ– বিশেষ লক্ষণ বলতে রোগাক্রান্ত স্থানের আকৃতি-প্রকৃতি এবং এর লক্ষণ কখন কি অবস্থায় বাড়ে-কমে সেসব সংগ্রহ করা।
(৪) অসাধারণ লক্ষণ– যে সকল লক্ষণ রোগের সাধারণ বৈশিষ্ট্য অপেক্ষা ব্যতিক্রমধর্মী বা যাহা অদ্ভুত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসূচক, সুস্পষ্ট, যেখানে একটিমাত্র লক্ষণ একটিমাত্র ঔষধকে নির্দেশ করে এই জাতীয় লক্ষণকে অসাধারণ লক্ষণ বলে। যেমন- জলপানের ইচ্ছা পিপাসাহীনতা (আর্স, ক্যালাডি), বুক ধড়-ফড়ানিতে তাড়াতাড়ি হাঁটিলে উপশম (আর্জ নাইট)প্রভৃতি।
(৫) সাধারণ লক্ষণ– যে সকল লক্ষণ প্রায় সকল ঔষধে দেখা যায় বা কোন নির্দিষ্ট রোগের সকল রোগীর মধ্যে দেখা যায়, যাহা অস্পষ্ট, অনির্দিষ্ট ও বৈশিষ্ট্যহীন সে সকল লক্ষণকে সধারণ লক্ষণ বলে। যেমন- রক্ত আমাশয়, আঁচিল, শিরঃপীড়া প্রভৃতি


Homeopathy has 4 principles that are its foundation. They remain unchanged over the last 200 years as their truth is demonstrated through successful treatment of the sick.

হোমিওপ্যাথির ৪ টি মূলনীতি রয়েছে যা এর ভিত্তি। অসুস্থদের সফল চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের সত্য প্রমাণিত হওয়ায় তারা গত ২০০ বছর ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে।

The cornerstone principle is Similia Similbus Curentur, “Let likes cure likes”
Homeopathy actually derives its name from the Greek, homoeo=’similar’, and pathos=’suffering’. Through research and practice Hahnemann verified cure through the use of similars. A substance that can produce disease in a healthy person is used to elicit a healing response in someone presenting with a similar disease. Each person shows symptoms of the body/mind/spirit when they are sick. Some of these symptoms are common to that sickness, others are characteristic of that person in their sickness. The homeopathic practitioner matches the symptom picture of the homeopathic remedy to the symptom picture of the person, with particular attention paid to those symptoms which are unique to the individual.

ভিত্তি নীতিটি হ’ল সিমিলিয়া সিমিলবাস কুরেন্টুর, “চিকিৎসার নিরাময়ের পছন্দ হোক” হোমিওপ্যাথি আসলে গ্রীক, হোমিও = ‘অনুরূপ’ এবং প্যাথোস = ‘যন্ত্রণা’ থেকে এর নাম নিয়েছে। সিমালার ব্যবহারের মাধ্যমে গবেষণা এবং অনুশীলনের মাধ্যমে হ্যানিম্যান যাচাই করা নিরাময়। সুস্থ ব্যক্তির মধ্যে রোগ তৈরি করতে পারে এমন একটি পদার্থ একইরকম রোগের সাথে উপস্থিত কাউকে নিরাময় প্রতিক্রিয়া দেখাতে ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি ব্যক্তি যখন তারা অসুস্থ থাকে তখন শরীর / মন / আত্মার লক্ষণগুলি দেখায়। এর মধ্যে কয়েকটি লক্ষণ সেই অসুস্থতার পক্ষে সাধারণ, অন্যরা তাদের অসুস্থতায় সেই ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ব্যক্তির লক্ষণ চিত্রের জন্য হোমিওপ্যাথিক প্রতিকারের লক্ষণ চিত্রটির সাথে মেলে, সেই লক্ষণগুলিতে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া যা ব্যক্তির পক্ষে অনন্য।

The second principle of homeopathy is The Single Remedy.
Only one homeopathic remedy is given at any one time. It would be difficult, if not impossible, to ascertain the action of multiple homeopathic remedies given all at once. The response of the vital force would be unpredictable and ambiguous. Though Hahnemann experimented with this approach he abandoned it as unsatisfactory.

হোমিওপ্যাথির দ্বিতীয় নীতিটি হল সিঙ্গেল প্রতিকার। যে কোনও এক সময় মাত্র একটি হোমিওপ্যাথিক প্রতিকার দেওয়া হয়। একসাথে দেওয়া একাধিক হোমিওপ্যাথিক প্রতিকারের ক্রিয়া নির্ধারণ করা কঠিন, যদি অসম্ভব না হয় তবে তা কঠিন হবে। অত্যাবশ্যক শক্তির প্রতিক্রিয়া হবে অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অস্পষ্ট। যদিও হ্যানিম্যান এই পদ্ধতির সাথে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন তবে তিনি এটিকে অসন্তুষ্টি হিসাবে ত্যাগ করেছিলেন।

The third principle of homeopathy is The Minimum Dose.
This refers to the infinitesimal doses of medicine given as well as to the repetition of dose only when necessary. Drugs given to individuals in material doses frequently cause side effects or adverse reactions. To curtail this problem, the homeopath administers the smallest possible dose so as to maximize beneficial effects and minimize side effects. Repetition of dose is determined by the individual’s response to the remedy. Unnecessary repetition may lessen the response, even to the correct remedy. In homeopathy, less is better.

হোমিওপ্যাথির তৃতীয় নীতিটি হ’ল ন্যূনতম ডোজ। এটি কেবলমাত্র যখন প্রয়োজন হয় তখন ওষুধের অসীম ওষুধের সাথে সাথে ডোজটির পুনরাবৃত্তিকে বোঝায়। উপাদানগুলির ডোজগুলিতে ব্যক্তিদের দেওয়া ড্রাগগুলি ঘন ঘন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণ হয়ে থাকে। এই সমস্যাটি কমাতে, হোমিওপ্যাথ সম্ভাব্যতম ক্ষুদ্রতম ডোজ পরিচালনা করে যাতে উপকারী প্রভাবগুলি সর্বাধিকতর করতে এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি হ্রাস করতে পারে। ডোজ পুনরাবৃত্তি প্রতিকার ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া দ্বারা নির্ধারিত হয়। অপ্রয়োজনীয় পুনরাবৃত্তি প্রতিক্রিয়া হ্রাস করতে পারে এমনকি সঠিক প্রতিকারের জন্যও। হোমিওপ্যাথিতে কম ভাল হয়।

The fourth principle of homeopathy is The Potentized Remedy.
Homeopathic remedies, though made from natural substances such as plants, minerals, animals, etc., are manufactured unlike any other medicine. Through a process of serial dilution a very dilute extract is made. With every step of dilution the remedy is vigorously shaken-succussed. This process of succussion is designed to arouse the dynamic nature of the medicine. To affect the vital force, a similarly energetic, homeopathic remedy must be employed.

হোমিওপ্যাথির চতুর্থ নীতিটি হ’ল পোটেন্টাইজড প্রতিকার। হোমিওপ্যাথিক প্রতিকারগুলি যেমন উদ্ভিদ, খনিজ, প্রাণী ইত্যাদির মতো প্রাকৃতিক পদার্থ থেকে তৈরি তবে অন্য কোনও ওষুধের থেকে ভিন্ন। সিরিয়াল হ্রাস একটি প্রক্রিয়া মাধ্যমে একটি খুব পাতলা এক্সট্রাক্ট তৈরি করা হয়। দুর্বলতার প্রতিটি পদক্ষেপের সাথে প্রতিকারটি জোরালোভাবে কাঁপানো-আক্রান্ত হয়। সাফল্যের এই প্রক্রিয়াটি ওষুধের গতিশীল প্রকৃতি জাগ্রত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। অত্যাবশ্যক শক্তিকে প্রভাবিত করার জন্য, একইভাবে শক্তিশালী, হোমিওপ্যাথিক প্রতিকার অবশ্যই কাজে লাগানো উচিত।

x

শর্তাবলীশর্তাবলী
১। Dynamis – life energy, vital force. ১। ডায়নামিস – জীবন শক্তি, প্রাণশক্তি।
২। Potentized – usually refers to a substance prepared according to homeopathic pharmaceutical standards. This means that it has gone through serial dilution and succussion. ২। সম্ভাব্য – সাধারণত হোমিওপ্যাথিক ফার্মাসিউটিক্যাল স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী প্রস্তুত পদার্থকে বোঝায়। এর অর্থ এটি সিরিয়াল হ্রাস এবং সংঘাতের মধ্য দিয়ে গেছে।
৩। Remedy – medicine, as in homeopathic remedy. ৩। প্রতিকার – ওষুধ যেমন হোমিওপ্যাথিক প্রতিকার হিসাবে।
৪। Succussion – the process of forcefully striking a homeopathic remedy against a firm surface. ৪। সাকাশন – একটি দৃঢ় পৃষ্ঠের বিরুদ্ধে একটি হোমিওপ্যাথিক প্রতিকার জোরপূর্বক আঘাত করার প্রক্রিয়া।
৫। Vital force – the energy that maintains life in the individual (see Organon aphorisms 9-12). ৫। অত্যাবশ্যক শক্তি – এমন শক্তি যা ব্যক্তির জীবন বজায় রাখে (দেখুন অর্গানন অ্যাফোরিজমস 9-12)।


রোগ কি?
শরীরের প্রত্যেক অনু-পরমানুর উপর ক্ষমতা বিস্তারকারী ও সর্বদা ক্রিয়াশীল জীবনীশক্তি বা জৈব-প্রকৃতি কোন কারনে বিশৃঙ্খল হয়ে বা স্বাভাবিক নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটে যে অবস্থার অভিব্যক্তির সৃষ্টি হয় তাহাকে রোগবলে।

রোগের শ্রেণীবিভাগ
Class division of disease- রোগের শ্রেণী বিভাগ– হ্যানিমান রোগকে দুইভাগে ভাগ করিয়াছেন।
(১) অচির রোগ- তরুন রোগ বা অস্থায়ী রোগ বা একিউট রোগ।
(২) চির রোগ- প্রাচীন রোগ বা স্থায়ী রোগ বা ক্রণিক রোগ।

অচির রোগবীজ কি?
যে সমস্ত রোগ হঠাৎ উপস্থিত হয়, দ্রুত জীবনীশক্তির পরিবর্তন সাধন করে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই হয় রোগীর জীবন নাশ করে- না হয় সমূলে নিজেই (রোগ) দূরীভূত হয় তাকে অচির রোগ বলে।
এই সকল রোগের কোন স্থিতিশীলতা নেই।
এই রোগের ভোগকাল নির্দিষ্ট, এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই রোগের বিকাশ ও পরিণতি ঘটে (নিরাময় অথবা মৃত্যু)।
ঔষধ ছাড়াও তরুন রোগ আরোগ্য হয়, তবে সময় কিছুটা বেশি লাগতে পারে।
তরুন রোগের ভোগকাল অল্পদিন অর্থাৎ ২/১ দিন হতে সর্বোচ্চ ২/১ মাস পর্যন্ত হতে পারে।
তরুন রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবশ্যই বর্তমান বিদ্যমান লক্ষণ ও তার কারণের আলোকে ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে এবং যে কারণে রোগটি হয়েছে তা থেকে বিরত থাকতে হবে।

প্রধানতঃ মানসিক ও শারীরিক অনিয়মের ফলে বা স্বাস্থ্যবিধি লংঘনের ফলে এই জাতীয় রোগ ব্যক্তিগতভাবে যে কোন মানুষকে আক্রমণ করতে পারে।

বিভিন্ন ধরণের অচিররোগের উদাহরণঃ
সর্দি, জ্বর, উদরাময়, কলেরা, হাম, বসন্ত, ম্যালেরিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, গলক্ষত, বমি, এলার্জি, কাশি, কানে বেদনা, আধকপালে মাথাব্যথা, আঘাত, দংশন, বিষক্রিয়া, কেটে যাওয়া, থেতলে যাওয়া ইত্যাদি।

এছাড়া যে সকল ক্রণিক বা পুরাতন রোগ বৃদ্ধি পেয়ে প্রবল যন্ত্রণা সৃষ্টি করে সেই রোগেও নতুন বা তরুন রোগের মত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। যেমন: পুরাতন আমাশয় প্রবল আকার ধারণ করলে, হাঁপানীর টান বৃদ্ধি পেলে।

আর যে সকল রোগ তরুণ রোগের মত দেখা দেয়; কিন্তু চিকিৎসা করলে সাময়িক উপশম হয়ে কিছুদিন পরে আবার ফিরে আসে সেই সকল রোগের চিকিৎসা ক্রণিক বা পুরাতন রোগের মত গ্রহণ করতে হবে।

অচির রোগবীজ তিন প্রকারঃ
ব্যক্তিগতঃ এই প্রকার তরুন রোগ মানুষের ব্যক্তিগত কর্মের জন্য আক্রমন করে। যেমন-সর্দি, উদরাময় প্রভৃতি।
বিক্ষিপ্তঃ হঠাৎ কোন স্থানে দুই একজনের মধ্যে দেখা যায়, সুনির্দিষ্ট কোন নাম নাই।
মহামারীঃ বাহ্যিক উত্তেজক করণ যেমন-যুদ্ধ, প্লাবন, দুর্ভিক্ষ প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যের কারণে বহুলোক আক্রন্ত হয়। যেমনঃ বসন্ত, কলেরা, হাম ইত্যাদি।

চির রোগবীজ কি?
যে সমস্ত রোগ দীর্ঘদিন অর্থাৎ মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর থাকে, তেমন যন্ত্রণাদায়ক নয়- কিন্তু সহজে সারে না, একবার সারলেও আবার দেখা দেয় সেগুলি চির রোগ।

যে সমস্ত রোগের শুরুটা প্রায়ই জানা যায় না, ধীরে ধীরে সামান্য শক্তিতে, অগোচরে আরম্ভ হয়ে বহুদিন ধরে জীবনীশক্তির বিকৃতি ঘটায় এবং দেহকে এরূপ অন্ত:সারশূণ্য করে ফেলে যে প্রকৃত ঔষধ ব্যতীত জীবনীশক্তির নিজস্ব প্রচেষ্টায় এর হাত থেকে পরিত্রাণ পায় না তাকে চিররোগ বলে।

চিররোগ ধীরে ধীরে জীবনীশক্তিকে নষ্ট করতে থাকে এবং ঔষধ ছাড়া কখনও নিরাময় হয় না।
চিররোগের কারণ অদৃশ্য, সহজে খুজে পাওয়া যায় না।
রোগের ভোগকালের কোন সময়সীমা নেই। রোগী আজীবন চিররোগে ভুগতে পারে। এই রোগ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে রোগীর মৃত্যু ঘটায়।
হ্যানিম্যানের মতে, এই সকল রোগ উৎপত্তির মূল কারণ সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস, টিউবারকুলেসিস নামক রোগবীজ বা মায়াজম।

বিভিন্ন ধরণের চিররোগের উদাহরণঃ
সিফিলিস, বধিরতা, তোৎলামী, লিভারের সমস্যা, অস্থিক্ষত, গলক্ষত, মুখে ঘা, পাকস্থলীতে ঘা, হাঁপানী, হিপাটাইটিস, ল্যারিনজাইটিস, দ্রুত হৃদস্পন্দন, ওভারীর সমস্যা, ক্ষুধামান্দ্য, পুরাতন ডায়রিয়া, কার্বাঙ্কল, ক্যানসার, মৃগী, পক্ষাঘাত, খর্বাকৃতি, ধবল বা শ্বেতী।

হিস্টিরিয়া, হাঁপানী, মূত্রনালীর সংকীর্ণতা, মূত্রপাথুরী, একশিরা, ফাইলেরিয়া, ডিপথেরিয়া, বসন্ত, যোনিকপাট বন্ধ, সন্ন্যাস, পেশী বাত, গেটে বাত, সায়েটিকা, টাইফয়েড, টিউমার, ছানি, বাধক, ক্রণিক আমাশয়, হার্পিস, ধ্বজভঙ্গ, স্মরণশক্তি হ্রাস, বাচালতা, বমিভাব, মাথাব্যথা, সর্দি ঝরা, নাক দিয়ে রক্ত পড়ে।

ক্যান্সার, স্ট্রোক, হুপিং কাশি, মেদপ্রবণতা, বিভিন্ন ধরণের টিউমার, পুরাতন কাশি।
সন্ন্যাস, কিডনী অকেজো, সোরাইসিস, অতি ক্ষুধা, ওজনহীনতা, কালা।
শিশুদের কানের সংক্রমণ, ফ্লু, পিঠে ব্যথা, ঘাড় আড়ষ্টতা, হাত-পায়ে আড়ষ্টতা।
হৃদপিন্ডের পীড়া, উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্র, একজিমা, এলারজি, বমিভাব, মাথাব্যথা, পেশির আক্ষেপ।


চির রোগবীজ তিন প্রকারঃ
প্রকৃতি চিররোগঃ যেমন- হাঁপানি।
কৃত্রিম চিররোগঃঔষধজনিত চিররোগ-যেমন দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসের ঔষধ খাওয়ার ফলে গ্যাংগ্রীন।
মিথ্যা চিররোগঃ চিররোগের মত, কারণ দূর হলে রোগ বিনা চিকিৎসাই ভাল হয়ে যায় বা আরোগ্যের পথে বাধা দূর হয়ে যায়, যেমন-দীর্ঘদিন রাত্রি জাগরণের ফলে অনিদ্রা।


———————-
x

Code of Homeopathic Ethics
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নীতিমালা হোমিওপ্যাথদের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা প্রণয়ন ও প্রচলনের একটা পটভূমিকা আছে। ১৯৮৩ সালের ২৫ শে আগস্ট “ দি বাংলাদেশ গেজেট ” –এ THE BANGLADESH HOMOEOPATHIC PRACTITIONERS ORDINANCE, 1983 ( Ordinance no, XLI of 1983 ) প্রকাশিত হয়।

এ গেজেটের ৫৩১৫ পৃষ্ঠায় এ অর্ডিন্যান্সের ৩৪ সেকশনে বলা হয়েছেঃ “ Code of Ethics – A registered practitioner and listed Homoeopath shall abide by the Code of Ethics for Homoeopathic practitioners framed by the board and approved by the Government . ” অর্থাৎ বোর্ড কর্তৃক প্রণীত ও সরকার কর্তৃক অনুমোদিত চিকিৎসা নীতিমালা ( Code of Ethics ) সকল রেজিস্টার্ড ও তালিকাভুক্ত হোমিওপ্যাথগণকে মেনে চলতে হবে। এখানে বোর্ড বলতে “ বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ড ” ( সাবেক “ বোর্ড অভ হোমিওপ্যাথিক সিস্টেম অভ মেডিসিন ” ) – কে বুঝানো হয়েছে।

ইতোমধ্যে বোর্ড কর্তৃক উক্ত চিকিৎসা নীতিমালা প্রণীত ও প্রকাশিত হয়েছে । বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত “ বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পত্রিকা ” – এর সেপ্টেম্বর, ১৯৮৫, ২য় বর্ষ, ৩য় সংখ্যায় বোর্ডের রেজিস্টার মোঃ ফজলুর রহমান ভূঁয়া এ বিষয়ে নিম্নোক্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন –

“ এই মর্মে সকল রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের জ্ঞাতার্থে জানানো যাইতেছে যে, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩- এর ৩৪ নং ধারা অনুযায়ী বোর্ড কর্তৃপক্ষ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের কর্তব্য ও দায়িত্ব বিষয়ক নিয়মাবলী সম্বলিত ‘ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নীতিমালা ’ নামক একটি পুস্তিকা রচনা করিয়াছেন। উক্ত পুস্তিকায় উল্লেখিত নীতিমালার শর্তাদি লঙ্ঘনকারীর জন্য এক হাজার টাকা জরিমানা ও এক বৎসরের কারাদণ্ডসহ রেজিস্ট্রেশন বাতিলের বিধান রহিয়াছে। ”

“ এমতাবস্থায় উক্ত পুস্তিকার প্রতি কপির জন্য ছয় টাকা ব্যাংক ড্রাফ্‌ট বোর্ডে প্রেরণ করিয়া কপি সংগ্রহ করতঃ হোমিও বিধানসমূহ পালন করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা যাইতেছে। ”

উক্ত পুস্তিকার ১ পৃষ্ঠার শেষে লেখা তথ্য থেকে দেখা যায় যে, ১৯৮৪ ইং সালের ২০ শে ডিসেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত বোর্ডের ষষ্ঠ সভায় বোর্ড কর্তৃক প্রণীত এ পুস্তিকাটা অনুমোদিত হয়। তাছাড়া এ পুস্তিকার প্রচ্ছদে উল্লেখ রয়েছে যে, এটার প্রকাশ কাল ১৯৮৫ ইং সাল।

“ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের কর্তব্য বিষয়ক নিয়মাবলী ১৯৮৩ ইং সনের ২৫শে আগস্ট প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেটের অর্ডিন্যান্স ( No XLI, 1983 ), সেকশন ৩৪, পৃষ্ঠা ৫৩১৫ এর সার-সংক্ষেপ অনুযায়ী রচিত । ”

সকল প্রকার পীড়িতের প্রতি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের কর্তব্য।
১। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সব সময় নিশ্চিতভাবে তাঁর কার্যকলাপের সর্বোচ্চ মান রক্ষা করবেন।
২। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক কখনও নিজে শুধুমাত্র আয়ের উদ্দেশ্য দ্বারা প্রভাবিত হতে পারবেন না
৩। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের অবশ্যই উদ্দেশ্য থাকবে রোগীকে সামগ্রিকভাবে চিকিৎসা করার এবং তাঁর চিকিৎসার ধারা নিশ্চয়ই ডাক্তার স্যামুয়েল হানেমান রচিত ‘ অর্গানন অব মেডিসিন ’ নামক গ্রন্থের উপর প্রতিষ্ঠিত হবে।
৪। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সর্বদা রোগীর স্বাস্থ্যকে পুনরুদ্ধার করা ও মানুষের জীবন রক্ষা করার গুরুত্বকে নিশ্চিতভাবে মনে রেখে চিকিৎসা কর্মে ব্রতী হবেন।
৫। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের নিকট তাঁর রোগী পূর্ণ আনুগত্যের এবং তাঁর পেশাগত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার দাবী রাখে। যখনই কোন চিকিৎসা বা পরীক্ষা তাঁর সাধ্যের বাইরে হবে তখন তিনি অপর এমন একজন চিকিৎসককে আহ্বান করবেন যার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা আছে, অথবা তিনি সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ বা চিকিৎসা গ্রহণের জন্য রোগীকে উপদেশ দেবেন।
৬। চিকিৎসক হিসাবে তাঁর উপর যে বিশ্বাস ন্যাস্ত করা হয়েছে সে পরিপ্রেক্ষিতে একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক রোগীর রোগ সম্বন্ধীয় যাবতীয় গোপন তথ্য যা তাঁকে বলা হয়েছে বা তিনি নিজে জানতে পেরেছেন সে সবের কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করতে রোগীর নিকট দায়বদ্ধ থাকবেন।
৭। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক জরুরি ক্ষেত্রে কোন রোগীকে নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করবেন, যদি না তিনি আশ্বস্ত হন যে তা অন্য কারও দ্বারা সম্ভব এবং তিনি তা নিশ্চয়ই দেবেন।
৮। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক নিশ্চয়ই এমন শক্তিকৃত ঔষধ ক্ষুদ্রতম মাত্রায় প্রয়োগ করবেন যা সূক্ষ্ম মানবদেহে পরীক্ষিত হয়েছে অথবা এই পেশার সাথে জড়িত উপযুক্ত বা যোগ্য ব্যক্তির দ্বারা চিকিৎসা শাস্ত্রানুসারে অনুমোদিত।
৯। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ১৯৮৩ ইং সালের বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক প্র্যাকটিসনার্স অর্ডিন্যান্স নং ৪১ নিশ্চয়ই অনুসরণ করবেন এবং ভবিষ্যতে সরকার কর্তৃক গৃহিত হোমিওপ্যাথিক মূলনীতি ভিত্তিক ব্যবস্থাদি অবশ্যই পালন করবেন।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের পদবী বা উপাধি ব্যবহার ও প্রচার নীতি।
১। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক তাঁর চিকিৎসা কর্মস্থলে বা চেম্বারের দরজায় বা দেয়ালে একটি নামফলক ব্যবহার করতে পারবেন। সে নামফলকে তিনি তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা অথবা ডিগ্রী বা ডিপ্লোমা যা তাঁকে এমন কোন কর্তৃপক্ষ প্রদান করেছে, যাকে ঐ সকল ডিগ্রী, ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য সরকার উপযুক্ত বলে স্বীকার করেছেন বা ক্ষমতা দিয়েছেন, তা উল্লেখ করতে পারবেন।
২। কোন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক তাঁর নামফলক, প্যাড বা রোগীলিপিতে নিজেকে কোন বিশেষজ্ঞ বলে বা কোন রকম চিকিৎসায় পারদর্শী বলে প্রকাশ করতে পারবেন না।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের জন্য নীতি বহির্ভূত কার্যকলাপ।
১। নিজের গুণ বা পারদর্শিতা সম্পর্কে কোন প্রকার প্রচার বা বিজ্ঞপ্তি করা।
২। রোগীর সাথে কোন প্রকার চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া অথবা গ্যারান্টি দিয়ে কোন প্রকার চিকিৎসা করা।
৩। হোমিওপ্যাথিক মূলনীতি বিরধিজে কোন প্রকার টনিক, মলম, প্যাটেন্ট বা অন্য কোন প্রকার ঔষধ প্রস্তুত বা ব্যবহার করা।
৪। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের নিজ পেশার স্বাধীনতা থাকে না এমন কোন চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে বা প্রোগ্রামের সাথে জড়িত থাকা।
৫। রোগীকে চিকিৎসা করার জন্য উপযুক্ত পেশাগত ফি ব্যতীত অন্য কোন প্রকার পুরুস্কার বা অর্থ গ্রহণ।
৬। রোগীর মানসিক এবং শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে বা নষ্ট করে এমন কোন ঔষধ প্রয়োগ করা বা ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যদি তা চিকিৎসা বিজ্ঞানের কঠোর বিবেচনায় চিকিৎসাগত বা রোগ প্রতিরোধগত নির্দেশ অনুযায়ী রোগীর স্বার্থে তাঁর উপর প্রয়োগ করা না হয়ে থাকে।
৭। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে যেসকল আবিস্কার স্বীকৃত হয়নি এবং সুস্থ মানবদেহে পরীক্ষিত হয়নি সে সকল গবেষণালব্ধ ফল প্রকাশ করা।
৮। আইন সঙ্গত ভাবে প্রমান করতে পারা যাবে না, চিকিৎসা ক্ষেত্রে এমন কোন কাজ করা। ”

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের একের প্রতি অপরের কর্তব্য।
১। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক তাঁর সতীর্থ এবং সহকর্মীদের সাথে এমন সব আচরণ করবেন যা তিনি তাদের নিকট হতে আশা করেন।
২। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের কোন অবস্থাতেই অপর একজন হোমিওপ্যাথিক বা অন্য কোন মতাবলম্বী চিকিৎসকের সম্পর্কে দুর্নাম বা কুৎসা রটনা করতে বা কটূক্তি করতে পারবেন না।
৩। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক এই পেশায় রত এবং সকল মতাবলম্বী চিকিৎসকদেরকে সম্মান প্রদর্শন করবেন।
৪। কোন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক অন্য কোন চিকিৎসকের নিকট হতে কোন অবস্থাতেই প্রলুব্ধ করে বা অন্য কোন উপায়ে রোগী সরিয়ে আনতে পারবেন না।
৫। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসককে যদি জরুরি ক্ষেত্রে অন্য একজন চিকিৎসকের চিকিৎসাধীন রোগীকে দেখার জন্য আহ্বান করা হয় তিনি পূর্ণ সততার সাথে সে রোগীকে দেখবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তিনি রোগীকে বা রোগীর আত্মীয়-সজনদের নিকট সকল অবস্থাতেই পূর্বতন ডাক্তারের কোন প্রকার ভুল চিকিৎসার খবর, তা যদি হয়েও থাকে, গোপন রাখবেন। ”

কোন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত হওয়ার প্রাক্কালে অবশ্যই নিম্নলিখিত শপথ বাক্য পাঠ করবেন।

বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের ঘোষণাপত্র।
১। আমি মনেপ্রাণে শপথ করছি যে আমি রোগার্ত মানুষের সেবায় আমার জীবন উৎসর্গ করব।
২। আমি আমার শিক্ষকদের প্রতি সব সময় যোগ্য সম্মান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব।
৩। আমি সততা ও মর্যাদার সাথে আমার পেশায় নিয়োজিত থাকব।
৪। আমার নিকট আমার রোগীর স্বাস্থ্যই হবে সর্বপ্রধান বিবেচ্য বিষয়।
৫। আমার উপর অর্পিত গোপনীয়তা আমি অবশ্যই রক্ষা করব।
৬। আমি আমার ক্ষমতার সর্বদিক দিয়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বৃত্তির সম্মান ও মহান ঐতিহ্য রক্ষা করব।
৭। আমার সতীর্থদের সাথে আমি অবশ্যই সৌভ্রাতৃত্ব রক্ষা করব।
৮। আমার এবং আমার রোগীদের মধ্যে বাধার সৃষ্টি করতে পারে এমন কোন ধর্মীয়, জাতীয়, গোষ্ঠীয়, দলগত বা রাজনৈতিক চিন্তা বা বিবেচনাকে আমি কখনও প্রশ্রয় দেব না।
৯। গর্ভ সঞ্চারের মুহূর্ত থেকে মানব জীবনের প্রতি আমি যথাসাধ্য সম্মান প্রদর্শন করব। এমনকি ভীতি প্রদর্শনেও আমি আমার চিকিৎসাজ্ঞান মানবিকতা পরিপন্থী কোন কাজে ব্যবহার করব না ।
১০। অর্গানন অব মেডিসিন, গ্রন্থের নীতি অনুসারে পরীক্ষিত, শক্তিকৃত একটি মাত্র ঔষধ একবারে সূক্ষ্ম মাত্রায় প্রয়োগ করব।

আমি সজ্ঞানে, সরলমনে, সস্রদ্ধচিত্তে এবং বিনা প্ররোচনায় উল্লেখিত শপথনামা পাঠ করলাম।


বিশ্বজনীন প্রাকৃতিক আরোগ্যনীতি কি ? আলোচনা কর।


বিশ্বজনীন প্রাকৃতিক আরোগ্যনীতি কি ? আলোচনা কর।

x
ভেষজ বা Drug কাহাকে বলে ?
যে সকল পদার্থ সুস্থ শরীরে প্রয়োগ করলে শরীর অসুস্থ হয় এবং অসুস্থ শরীরে সদৃশ লক্ষণ মতে প্রয়োগ করলে শরীর সুস্থ হয়, তাকে ভেষজ বলা হয়। অর্থাৎ যে সকল পদার্থের রোগ উৎপাদিকা ও রোগনাশিনী উভয়বিধ শক্তিই বর্তমান থাকে উহাদিগকে ভেষজ বলে। কাজেই ভেষজ হল ঔষধী গুণসম্পন্ন বস্তু যা থেকে ঔষধ প্রস্তুত করা যায়।

ভেষজ হল ঔষধি গুণ সম্পন্ন পদার্থ যা থেকে ঔষধ তৈরি করা হয়, ইহাতে রোগ উৎপাদন ও রোগ নাশক ক্ষমতা বিদ্যমান। যে সকল পদার্থকে হোমিওপ্যাথিক ফার্মাকোপিয়ার নির্দিষ্ট নিয়মে প্রস্তত বা শক্তিকৃত করলে রোগ উৎপাদন করে এবং অসুস্থদেহের রোগ মুক্ত করে তাকেই হোমিওপ্যাথিক ভেষজ বলে।

ঔষধ বা মেডিসিন কাহাকে বলে ?
বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে, ফার্মাকোপিয়ার নিদিষ্ট প্রক্রিয়া বা ফর্মুলা অনুযায়ী ভেষজ পদার্থ হতে প্রস্তুতকৃত পদার্থ,যা চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র অনুসারে আভ্যন্তরিন বা বাহ্যিক প্রয়োগে রোগারোগ্য এবং রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম, তাকে ঔষধ বলে।

রিমেডি Remady বা রোগ প্রতিকারক ঔষধ কাহাকে বলে ?
যখন একটি ঔষধ সদৃশ বিধানমতে প্রয়োগ করা হয় এবং প্রয়োগের ফলে শরীরে সুস্থাতা আনয়ন করে, তাকে রিমেডি বলা হয়। অর্থাৎ, সুনির্বাচিত ঔষধকেই রিমেডি বলা হয়।

হোমিওপ্যাথিক ফার্মাকোপিয়া ভেষজের উৎসের আলোচনা কর।
🌱 উদ্ভিদজঃ একোনাইট, বেলেডোনা, সিঙ্কোনা।
🌱 প্রাণীজঃ এপিসমেল, ফ্যান্থারিস, ল্যাকেসিস।
🌱 খনিজঃ নেট্রাম-মিউর,ক্যালি-কার্ব, ফেরাম-ফস, ফসফরাস, সালফার।
🌱 গ্রন্থিজঃ ল্যাক-ক্যানাইনাম, থাইরয়ডিন, ইনসুলিন।
🌱 শক্তিজঃ এক্স-রে, রেডিয়াম।

ভেষজ সংগ্রহ করার সময় কি কি সাধারণ নিয়ম অনুসরণ করতে হয়।
ভেষজটি যদি উদ্ভিদ হয় তাহলে উদ্ভিদ বিজ্ঞানী দ্বারা সনাক্ত করতে হবে।
উদ্ভিদের সতেজ ও টাটকা অংশ সংগ্রহ করিতে হইবে।
উদ্ভিদটি কীটপতঙ্গের দ্বারা আক্রান্ত হলে চলবে না।
প্রখর রোদ, বৃষ্টির সময় বা পরে, শীতের সকালে যখন শিশির পড়ে তখন সংগ্রহ করা যাবেনা।
সাধারণতঃ ফুল ফোটার সময় বা পূর্ব মুহূর্তে সংগ্রহ করা উচিত।
প্রণীজ কোন ভেষজ সংগ্রহ করিতে হইলে সবল, স্বাস্থ্যবান প্রণী সংগ্রহ করার জন্য জীব বিজ্ঞানীদের সাহায্য নিতে হবে।
খনিজ পদার্থ সংগ্রহ করিতে হইলে কোন রসায়নবিদের সাহায্য নিতে হবে।
ভেষজ সংগ্রহের পর বোতল রেখে ভেষজের নাম, সংগ্রের স্থান ও তারিখ, সংগ্রহ কারীর নাম ইত্যাদি লিখে লেবেল এটে দিতে হবে।

ঔষধ পরীক্ষার উদ্দেশ্য বা প্রয়োজনীয়তা কি?
১। প্রতিটি ঔষধের রোগোৎপাদকা শক্তির পূর্ণ পরিচয় বিশদ ভাবে জানা, অর্থাৎ সুস্থাবস্থায় দেহযন্ত্রের ক্রিয়ায় ও অনুভূতিতে কিরূপ বিকৃত সাধন করে তাহা জানা।
২। প্রতিটি ঔষধের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যাবলীর স্বাতন্ত্র্য অনুধাবণ করা ও অন্য ঔষধ হইতে ইহাকে পৃথক করা।
৩। সদৃশ লক্ষণযুক্ত রোগে এই ঔষুধের উপযুক্ত প্রয়োগ বিধি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা।

ডাঃ রবার্ট বলেন ড্রাগ প্রুভিং এর প্রকৃত উদ্দেশ্য হইল ঔষধ সৃষ্ট রোগের এক জীবন্ত চিত্র অংকন করা যাহাকে রোগীর দেহে দেখা মাত্র আমরা চিনিতে পারে

হোমিওপ্যাথিক ঔষধের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
হোমিওপ্যাথিক ঔষধের বিভিন্ন ধরনের শক্তিকৃত পদার্থ ও শক্তিকৃত শক্তি বিশেষ। ঔষধ তৈরির জন্য বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ, প্রাণীজ, খনিজ, রোগ বীজজাত প্রভৃতি পদার্থকে বিভিন্ন প্রকার ভেষজবহের সহিত নিদিষ্ট অনুপাতে মিশ্রিত করিয়া শক্তিকৃত করা হয়।
হোমিওপ্যাথিক ঔষধ একক ভাবে সুস্থ মানুষের উপর পরীক্ষার মাধ্যমে আবিস্কৃত হইয়াছে।
হোমিওপ্যাথিক ঔষধ রোগীর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণসমষ্টির সদৃশ লক্ষণে প্রয়োগ করা হয়।
একবারে একটি মাত্র হোমিওপ্যাথিক ঔষধ রোগীতে প্রয়োগ করা হয়। বিভিন্ন ঔষধের সংমিশ্রণ হোমিওপ্যাথিতে নাই।
হোমিওপ্যাথিক ঔষধ এক সময় একটি পরিবর্তিত মাত্রায় প্রয়োগ করিতে হয়।
হোমিওপ্যাথিক ঔষধের দ্বারা রোগের চিকিৎসা করা হয় না, রোগীর চিকিৎসা করা হয়। রোগীর কোন অংগ বিশেষের বা আংশিক চিকিৎসা করা হয় না। সামগ্রিক ভাবেই সম্পূর্ণ রোগীর চিকিৎসা করা হয়।
হোমিওপ্যাথিক ঔষধ স্থুলমাত্রায় প্রয়োগ করা হয় না। সূক্ষ্ম বা ক্ষুদ্রতম মাত্রায় ইহা প্রয়োগ করিতে হয়।
যথার্থভাবে সদৃশ লক্ষণসম্পন্ন হোমিও ঔষধ প্রয়োগে আদর্শ আরোগ্য সাধিত হয় এবং রোগীর পূর্ব স্বাস্থ্য পুণরায় ফিরিয়া আসে।







একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান কর্তব্য হইল চিকিৎসার উদ্দেশ্যে রোগী পরীক্ষা বা ভালভাবে তাহার লক্ষণ সংগ্রহ করা। যথার্থ আরোগ্য সম্পাদনের জন্য চিকিৎসকে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করিতে হয়। চিকিৎসক রোগীকে গ্রহণ করার সময় হইতে ঔষধের ক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত সর্বাঙ্গীণ ভাবে এবং রোগীকে বিশেষ ভাবে অধ্যয়ন করিতে হয়। রোগী পরীক্ষা বলিতে তাই আমরা বুঝি রোগীর লক্ষণসমষ্টি সংগ্রহের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র অংকন করা।

কেইস রেকর্ডকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করে করা যেতে পারে
১) বর্তমান(পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব সমস্যা)।
২)অতীত (সারাজীবনে রোগী যে সকল রোগে আক্রান্ত হয়েছে তার বিবরণ,টিকা, মানসিক ও শারীরিক আঘাত,অপারেশন,আগুনে পোড়া,সাপ ও কুকুরের কামড়,ধারালো কিছুতে কেটে যাওয়া,বিষ খাওয়া ইত্যাদি)।
৩) বংশ (রক্তের সম্পর্কীয় সবার কার কি রোগ আছে বা ছিল)।
৪) মানসিক (ইচ্ছাবৃত্তি,বুদ্ধিবৃত্তি,স্মৃতিশক্তি,স্বপ্ন)।
৫)সার্বদৈহিক (শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রমসমূহ যেমন-ঘাম,ঘুম,লালা,মল,মূত্র,ক্ষুধা,পিপাসা,কাতরতা,খাদ্য-ইচ্ছা,অনিচ্ছা,অসহ্য,হ্রাস বৃদ্ধি,ব্যথার ধরণ,ঋতুস্রাবের প্রকৃতি ইত্যাদি)।

এভাবে উল্লেখিত পাঁচ ধাপে সহজেই সম্পূর্ণ রোগীলিপি প্রস্তুত করা সম্ভব হয়। এটি গেল রোগীলিপির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।নিচে একটি রোগীলিপির ফরম বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
রোগীলিপির স্তরসমূহরোগীলিপির স্তরসমূহের বিবরণ
১. রোগী পরিচিতি ক) নাম / ঠিকানা
খ) পেশা
গ) শারীরিক গঠন
ঘ) বৈবাহিক অবস্থা
ঙ) রোগর বাসস্থান ও পীরিপার্শ্বিক পরিবেশ
২. বর্তমান কষ্টের বিবরণ ক) কষ্টটি কোন অঙ্গে
খ) কতদিন যাবৎ/কখন থেকে কষ্টটি শুরু হয়
গ) স্থায়িত্ব বা সময়
ঘ) কষ্টটি কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়
ঙ) কষ্টটির প্রকাশ বা অনুভূতি
চ) কষ্টটির উৎপত্তির কারণ
ছ) এর সাথে সম্পর্কযুক্ত লক্ষণ
জ) কষ্টটি কখন ও কিসে বাড়ে
ঝ) কষ্টটি কখন ও কিসে কমে
ঞ) এই কষ্টের কি ধরনের চিকিৎসা করা হয়েছে ইত্যাদি
৩. সার্বদৈহিক অবস্থা ক) পিপাসা
খ) জিহবা
গ) লালা
ঘ) ক্ষুধা
ঙ) খাদ্য
চ) বায়ু নিঃসরণ
ছ) মল
জ) প্রস্রাব
ঝ) ঘুম
ঞ) স্বপ্ন
ট) ঘাম
৪. সাধারণ লক্ষণ ক) শীতকাতর
খ) গরমকাতর
গ) জ্বালা
ঘ) দুর্ঘটনা/ আঘাত
ঙ) বাহ্যশক্তির প্রভাব
৫. যৌন ক) যৌনজীবন-পুরুষ
খ) যৌনজীবন-মহিলা
গ) ঋতুস্রাব
ঘ) শ্বেতপ্রদর
ঙ) মহিলাদের-অন্যান্য
৬. মন ক) স্মৃতিশক্তি
খ) ভ্রান্ত বিশ্বাস
গ) ভয়
ঘ) ভুল
ঙ) কথা
চ) প্রলাপ
ছ) কান্না
জ) হাসি
ঝ) প্রকৃতি
ঞ) স্বভাব
ট) গান
ঠ) অঙ্গভঙ্গী
ড) ইচ্ছা
ঢ) বিতৃষ্ণা
ন) অন্যান্য

৭. পূর্ব রোগের ইতিহাস

৮. মায়াজম


ব্যবস্থাপত্র কি?
একটি চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্রে রোগীর নাম, বয়স, তারিখ, ক্ষেত্র বিশেষে শিশুদের ওজন লিখতে হয়। বামদিকে রোগীর রোগ সংক্রান্ত সমস্যাগুলো লিখতে হয়। এরপর চিকিৎসক রোগী পরীক্ষা করে কী কী অনুসন্ধান পেলেন সেগুলো লিখতে হয়। ডান দিকে আরএক্স চিহ্ন দিয়ে ওষুধের নাম লিখতে হয় এবং নিচে চিকিৎসকের স্বাক্ষর দিতে হয়।

ওষুধ লেখার সময় ট্যাবলেট, ক্যাপসুল বা ইনজেকশন এটা লিখতে হয়। এটা কত মিলি, মাত্রা (ডোজ) কতটুকু, খাওয়ার আগে না পরে গ্রহণ করতে হবে, তা লিখতে হয়। সেইসঙ্গে ওষুধের নামটা অবশ্যই ইংরেজিতে লিখতে হয়। কেননা, ইংরেজিতে চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র লিখলে এটা বিশ্বের যেকোনও দেশের চিকিৎসক দেখতে পারবেন। রোগীর জন্য ব্যবস্থাপত্রের লেখা সহজবোধ্য করতে তা স্পষ্টভাবে এবং বড় হরফে লিখতে হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা রয়েছে চিকিৎসাপত্রে ওষুধের ‘শ্রেণীগত (জেনেরিক নাম)’ উল্লেখ করতে হবে, কোনো বাণিজ্যিক নাম উল্লেখ করা যাবে না।


প্রেসক্রিপশনে লেখা সঙ্কেতের অর্থ

অনেক সময় চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে এমন কিছু চিহ্ন ও অক্ষর থাকে যা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা কঠিন। এগুলির অর্থ কী?
প্রেসক্রিপশনে লেখা সঙ্কেতের অর্থ
১। আর এক্স: চিকিৎসা১০। পি সি: খাবার খাওয়ার পরে
২। কিউ: প্রত্যেক১১। বি আই ডি: দিনে দু’বার
৩। কিউ ডি: প্রতি দিন১২। টি আই ডি: দিনে তিন বার
৪। কিউ ও ডি: এই দিন ছাড়া প্রতিদিন১৩। বি ডি/ বি ডি এস: দিনে দু’বার ওষুধ নিতে হবে
৫। কিউ এইচ: প্রতি ঘণ্টায়১৪। টি ডি এস: দিনে তিন বার ওষুধ নিতে হবে
৬। এস: বাদ দিয়ে১৫। কিউ টি ডি এস: দিনে চার বার ওষুধ নিতে হবে
৭। সি: সঙ্গে১৬। বিটি: শোয়ার সময়
৮। এস ও এস: জরুরি ভিত্তিতে করণীয়১৭। বিবিএফ: প্রাতরাশের আগে
৯। এ সি: খাবার খাওয়ার আগে
শরীর সম্পর্কে কিছু সংক্ষিপ্ত ব্যবহার করা নাম বা অক্ষর
Bp = ব্লাড প্রেশার বা রক্তের চাপ HR = হার্ট রেট বা হৃদ্‌স্পন্দন
PR = পালস রেট T = তাপমাত্রা
BSF = ব্লাড সুগার ফাস্টিং usg = আল্ট্রাসনোগ্রাফি
CXR = চেস্ট/বুক এক্সরে RR = রেসপিরেশন বা শ্বাসপ্রশ্বাস
প্রেসক্রিপশনে ব্যবহৃত কিছু সংক্ষিপ্ত নাম
OPD = আউট পেশেন্ট ডিপার্টমেন্ট। অর্থাৎ, রোজ যে রোগী হাসপাতালে ডাক্তার দেখান কিন্তু ভর্তি থাকেন না, এমন রোগীদের ক্ষেত্রে OPD ব্যবহার করা হয়।
IPD = ইন পেশেন্ট ডিপার্টমেন্ট। অর্থাৎ, হাসপাতলে ভর্তি থেকে চিকিৎসা করান, এমন রোগীদের ক্ষেত্রে IPD ব্যবহার করা হয়।
C/O = কেয়ার অফ। অর্থাৎ, রোগী যখন তার শারীরিক সমস্যা ডাক্তারকে বলেন, সে ক্ষেত্রে কেয়ার অফ লিখে সে সমস্যাগুলো লিখে রাখেন।
o/e = অন এক্সামিনেশন। অর্থাৎ, ডাক্তার রোগীকে দেখে যা বোঝেন, তা লিখে রাখেন অন এক্সামিনেশন লেখার পর।
Rx = প্রেসক্রিপশন। অর্থাৎ, রোগীকে যে ওষুধগুলো বলবেন, সেগুলো লেখার আগে Rx লেখেন।
Hx = হিস্ট্রি। অর্থাৎ, রোগীর আগে যেসব সমস্যা ছিল, সেগুলো লিখে রাখেন।
Sx = সিমটমস। অর্থাৎ, রোগীর কী কী লক্ষণ রয়েছে।
Dx = ডায়াগনসিস। অর্থাৎ রোগী কি রোগে ভুগছেন, সেটি পরীক্ষার পর লিখে রাখেন।
ওষুধের পরিমাণ বা ডোজ
ml = মিলি লিটার
mg = মিলি গ্রাম



What is Rx ? The meaning of RX is a doctor’s prescription or medical prescription

Rx is commonly known to most as the symbol for a medical prescription. However, the symbol is derived from the Latin word recipe or “recipere,”which means to take. The word was later abbreviated and became Rx as we know it today.

Rx ল্যাটিন শব্দ ‘রেসিপি’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘নেওয়া’ বা ‘গ্রহণ করা’। অনেকেই নিশ্চয়ই খেয়াল করে থাকবেন যে, কিছু কিছু চিকিৎসক রোগী দেখার পরে যখন প্রেসক্রিপশন বা ব্যবস্থাপত্র লেখেন তখন ওষুধের নাম লেখার আগে Rx কথাটি লিখে থাকেন। আসলে Rx-কে চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।

Rx এর ইতিহাস; আমাদের দৈনিক জীবনে কত কিছুই ঘটে, চোখে দেখলেও সহজ জিনিষের অর্থ জানি না। যেমন ডাক্তাররা কোন রোগী দেখার পর প্রেসক্রিপশনে ঔষধ লেখার আগে Rx কথাটি লেখেন। আমরা সবাই দেখেছি। কিন্তু কেন এই Rx লেখা হয় এবং কিই বা এর গুরুত্ব জানেন কি ? আসুন দেখে নেওয়া যাক Rx লেখার কারন।

প্রেসক্রিপশনে ঔষধ লেখার আগে Rx কথাটি লেখার বেশ কয়েকটি ইতিহাস রয়েছে। শব্ধ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, Medical Dictionary মতে Rx একটি ল্যটিন শব্দ যা “recipe” ও “to take.” এই দুটি কথা বুঝায়। এদিকে Rx এর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, প্রাচীন মতে Rx হল বৃহস্পতি গ্রহের Astrological সাইন। বৃহস্পতিকে দেবতাদের গুরু মানা হয়। অন্যদিকে বৃহস্পতি গ্রহকে ইংরেজিতে Jupiter বলা হয়। Jupiter আবার রোমান মতে দেবতাদের রাজা। এই কারনেই Rx লিখে বৃহস্পতিকে স্মরণ করে পথ্য দেন ডাক্তাররা। জ্যোর্তিবিদরা RX কে বৃহষ্পতি গ্রহের প্রতীক হিসেবে কুষ্ঠি, ঔষধের ব্যবস্থাপত্রে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিপদের হাত থেকে দেবতার সাহায্য পাওয়ার আশায় এটি ব্যবহার শুরু করেন।

আবার Rx নিয়ে আর একটি প্রবাদ রয়েছে। সংক্ষেপে Rx হল Referred to Jesus Christ । এখানে কোন পথ্য দেবার আগ ‘প্রভু যিশু’ সমীপে সোপর্দ করে বাকি সব কিছু লেখা হয়। এই মতে Rx কে যেভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, সেটি হল R = Refer to এবং X = Jesus Christ, অর্থাৎ Rx = Refer to Jesus Christ, মানে ‘যিশুর নামে পড়া শুরু করুন’।

আবার Rx একটা প্রতীক হিসাবে ধরা হলে দেখা যাচ্ছে এই প্রতীকটি নেওয়া হয়েছে ল্যাটিন শব্দ থেকে। এর অর্থ হল Recipe, যার বাংলায় অর্থ ‘আপনি নিন’। মিশরীয় দেবতাদের মধ্যে স্বাস্থ্য দেবতার নাম ছিল হোরাস। প্রাচীন মিশরীয়দের মধ্যে স্বাস্থ্যের জন্য ‘হোরাসের চোখ’ নামে একটি কবচ রোগ থেকে মুক্তির জন্য ব্যবহার করা হত। এই কবচের প্রথমিক আকার অনেকটা হেরাসের চোখের মত ছিল। হোরাসের ডান চোখ সুর্যের (Ra) এবং বাম চোখ চন্দ্রের (X) প্রতিনিধিত্ব করে বলে মিশরীয়রা বিশ্বাস করত। আর দুইটি মিলে Rx. এটা নানান জিনিস দিয়ে তৈরি করা হত। কালক্রমে এটি স্বাভাবিক ব্যবস্থাপত্রে চলে আসে।

অন্যদিকে ব্যবলনীয় সভ্যতায়ও Rx এর ব্যবহার দেখা গেছে। সেই আমলে চিকিৎসকরা চিকিৎসা করার সময় দেবতা মারডুককে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করতেন। তাদের দেবতা মারডুকের প্রতীক চিহ্ন ছিল Rx । এই কারনে তারা রোগীর প্রেসক্রিপশনে Rx শব্দটি ব্যবহার করতেন।

বর্তমানে Rx means report extended. আপনার শরীরের সমস্যা বা রোগ নির্নয় করে এক্সটেন্ডেড যে রিপোর্ট বা পরবর্তি পদক্ষেপ এতে থাকে বিধায় এখানে Rx লেখা থাকে। চিকিৎসা শাস্ত্রের ঐতিহ্য মাথায় রেখে এটা বাদ দেওয়ার প্রায় অসম্ভব । তাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিয়ম অনুসরণ করে Rx-এর মাধ্যমে To take বুঝায়। এই কারনে বর্তমান সময়ে প্রেসক্রিপশনে অনেকটা প্রথা হিসেবেই Rx লিখা হচ্ছে। তবে অনেকে আবার Rx না লিখে Adv (Advice) লিখা শুরু করছেন।


প্রেসক্রিপশনের বিভিন্ন অংশের বর্ণনা

প্রেসক্রিপশনের একদম প্রথমের অংশে থাকে তারিখ বা date, এটা সাহায্যে ফার্মাসিস্ট (pharmacist) বুঝতে পারে কোন ডেটে প্রেসিডেন্টের দেয়া হয়েছে কোন কোন তারিখে ঔষধ নেওয়া হয়েছে বা নিতে হবে এবং এখানে যদি কোন নেশা জাতীয় ঔষধ থাকে থেকে থাকে তাহলে সেই ক্ষেত্রে বিশেষ করে এটা খুবই ভালোভাবে দেখে নেওয়া দরকার।

এরপরের অংশে রোগীর নাম বয়স , লিঙ্গ এবং তার ঠিকানা লেখা থাকে, এটা প্রেসক্রিপশনের একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস।

Superscription
এরপরে যে অংশটা আসছে সেটা নাম হচ্ছে সুপারস্ক্রিপশন (Superscription): প্রতিটি প্রেসক্রিপশনে এই অংশটি থাকেএটাকে বর্ণনা করার জন্য একটা সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয় সেটা হল Rx আরএক্স, এটা একটা ল্যাটিন শব্দ রেসিপি (recipe) এর সংক্ষেপ রূপ। প্রাচীনকালে এই সংকেত কে মনে করা হতো গ্রীক দেবতা জুপিটারের চিহ্ন এবং এটা ব্যবহার করা হতো ভগবানের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করার জন্য, তাড়াতাড়ি প্রেসেন্ট আগে সুস্থ করার জন্য করে দেওয়ার জন্য।
Inscription
এর পরের অংশ হলো ইনস্ক্রিপশন (Inscription), এটাই হচ্ছে প্রেসক্রিপশন এর প্রধান অংশ যার মধ্যে কি কি ঔষধ থাকবে, কত পরিমাণে থাকবে এইসব লেখা থাকে। সাধারনত এই অংশটি ইংরেজিতে লেখা হয় এবং ইংরেজি আর ল্যাটিন (latin) ভাষাতে অনেক সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।
Subscription
এরপরে যে অংশটি আসছি সেটি হল সাবস্ক্রিপশন (Subscription), এই অংশটি আগেকার দিনে এটা ব্যবহার হতো, এই অংশে ফার্মাসিস্ট এর প্রতি একটা নির্দিষ্ট বার্তা থাকতো প্রেসক্রিপশনটা কে তৈরি করার জন্য এবং ডোজ গুলো দেওয়ার জন্য। যেহেতু আজকালকার দিনে বেশিরভাগ ঔষধ ই রেডিমেড অর্থাৎ তৈরি হয়েই আসে, তাই প্রেসক্রিপশনের এই অংশটি আর লেখা হয়না আর ব্যবহার ও আর নেই।
Signatura
সিগনেচার বা হস্তাক্ষর (Signatura): এই অংশে রোগীকে কখন কিভাবে ঔষধ নিতে হবে সেই বিষয়ে বলা থাকে। এই ব্যাপারে কোন প্রেসক্রিপসনে যা তথ্য দেওয়া থাকতো সেটাকে ঔষধ দেওয়ার পর সেই ঔষধের পাত্রে লেবেল হিসাবে লাগাতে হতো।
রেনুয়াল ইন্সট্রাকশন (renewal instructions) বা পুনর্নবীকরণঃ এই অংশটির প্রেসক্রিপশনের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই অংশে বলা থাকে কখন আবার নতুন করে কিনতে হবে এবং নিতে হবে বিশেষ করে এটা নারকোটিক (narcotic) এবং যে সব ওষুধ অভ্যাসে পরিণত হয় অর্থাৎ habit forming drug এর ক্ষেত্রে এই অংশটি খুবই জরুরী।

সর্বশেষে অংশটি যিনি প্রেসক্রিপশনটা করছেন অর্থাৎ prescriber, তার স্বাক্ষর, ঠিকানা এবং তার রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেয়া থাকে যাতে এই প্রেসক্রিপশনের কোন ভুল ব্যবহার না হয়।

বেশিরভাগ প্রেসক্রিপশন আমরা সাধারণ মানুষরা বুঝতে পারিনা, কিন্তু প্রেসক্রিপশনের প্রতিটি অংশই খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই ঔষধ নেওয়ার পর ফার্মাসিস্ট আপনাকে যেভাবে কোন নির্দিষ্ট ওষুধের ব্যবহার সম্পর্কে বোঝাবেন এবং করতে বলবেন, আপনারা ঠিক সেই ভাবেই করবেন কারণ কোন ওষধ যতটা আমাদের শরীরের পক্ষে উপকারী, তার ভুল ব্যবহার হলে ঠিক তো ক্ষতিকর হতে পারে। সেই জন্য আমাদের সবাইকে এই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

x
হোমিওপ্যাথির নিয়মনীতি_পরীক্ষার সাজেশন
প্রথম বর্ষ
বিষয় কোড- ১০১

1. হোমিওপ্যাথি শব্দের উৎস লেখ এবং হোমিওপ্যাথি কাকে বলে?
2. হোমিওপ্যাথি নিয়মনীতি পাঠের প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে লিখ।
3. সুস্থ মানবদেহে ঔষধ পরীক্ষণের উদ্দেশ্য লিখ।
4. রোগ কি? উহার শ্রেণীবিভাগ কি কি?
5. হোমিওপ্যাথিতে রোগের লক্ষণ বলতে কী বোঝায় ?
6. মানসিক , দৈহিক , চরিত্রগত , অদ্ভুত , ধাতুগত , লক্ষণের দুইটি করে উদাহরণ দাও।
7. লক্ষণ ও চিহ্নের মধ্যে পার্থক্য কি ? দুইটি করে উদাহরণ দাও।
8. সূক্ষমাত্রা বা ক্ষুদ্রতম মাত্রা কাহাকে বলে?
9. চিকিৎসকের প্রধান উদ্দেশ্য কি?
10. আদর্শ আরোগ্য বলিতে কি বুঝ?
11. এলোপ্যাথিক ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার পার্থক্য কি ?
12. রোগ চিকিৎসায় লক্ষণ সমষ্টির প্রয়োজনীয়তা কি ?
13. জীবনীশক্তি, রোগশক্তি ও ঔষধশক্তির মধ্যে পার্থক্য কি?
14. চিররোগ ও অচিররোগের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
15. মায়াজম কি?মায়াজম (Miasm) কত প্রকার ও কি কি?
16. হোমিওপ্যাথির মূলনীতিসমূহ কি কি ?
17. ভেষজ কাহাকে বলে? ভেষজ ও ঔষধের মধ্যে পার্থক্য কি?
18. হোমিওপ্যাথিক ঔষধের উৎসসমূহ কি কি ?
19. ঔষধের রোগারোগ্য ক্ষমতা কিসের উপর নির্ভর করে।
20. ভেষজ পরীক্ষা কাহাকে বলে ?
21. ঔষধ পরীক্ষার উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা কি ?
22. সুস্থ মানুষের উপর ঔষধ পরীক্ষার যৌক্তিকতা কি ?
23. ঔষধের শক্তিকরণ বলতে কি বুঝ ?
24. দশমিক, শততমিক, পঞ্চাশ সহস্রতমিক রীতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
25. মাত্রাতত্ত কাহাকে বলে ?
26. রোগ নয় রোগীর চিকিৎসা কর -এই কথার অর্থ কি ?
27. রোগীলিপি কাহাকে বলে এবং এর প্রয়োজনীয়তা কি ?
28. ব্যবস্থাপত্র কি ? ব্যবস্থাপত্রের বিভিন্ন অংশের বর্ণনা দাও।


Si vous êtes protégé avec leur aide, l'essentiel est qu'ils sont durables. Cependant, cela compte également dans quelles conditions elles ont été créées. En cours de fabrication d'un préservatif, le latex liquide est chauffé à une température lorsqu'il durcit. Et dans le même temps, les substances cancérogènes sont distinguées - nitrosamines. Tous les fabricants ne les retirent pas de leurs produits en latex. Et bien que maintenant, il n'existe pas d'informations sur les risques pour la santé lorsque vous utilisez des préservatifs, il serait agréable de réduire l'influence de ces substances sur votre propre corps. Il est clair que les usines d'employés sont soumises à des nitrosamines dans une plus grande cialis original et étant donné que la production est située pour la plupart des pays du tiers monde, à propos de leur santé. Ces informations ne sont toutefois pas données pour que vous arrêtez d'utiliser des préservatifs, juste si vous avez le choix - Achetez Green. Ces fabricants paient suffisamment de travailleurs et dans le paquet utilisent parfois du recyclage.