Organon of Medicine

Tabs

Click on the x button in the top right corner to close the current tab:



x

সূত্রঃ ১। চিকিৎসকের একমাত্র মহৎ উদ্দেশ্য-

চিকিৎসকের মহৎ ও একমাত্র উদ্দেশ্য হলো রোগীকে স্বাস্থ্যে ফিরিয়ে আনা, যাহাকে বলা হয় আরোগ্য বিধান করা।
x

সূত্রঃ ২। আদর্শ আরোগ্যের শর্তসমূহ-

আরোগ্যবিধানের উচ্চতম আদর্শ হলো দ্রুত, বিনাকষ্টে ও স্হায়িভাবে স্বাস্থ্যের পুনরুদ্ধার, কিংবা স্বল্পতম সময়ের মধ্যে, সর্বাপেক্ষা নির্ভরযোগ্য ও নির্দোষ উপায়ে, সহজবোধ্য নীতির সাহায্যে সমগ্রভাবে রোগের দূরীকরণ ও বিনাশ।
x

সূত্রঃ ৩। চিকিৎসকের গুণাবলী-

যদি চিকিৎসকের স্পষ্ট বোধ থাকে পীড়ায় অর্থাৎ প্রত্যেক রোগীর ক্ষেত্রে কি সারতে হবে ( ব্যাধি সম্বন্ধে জ্ঞান), যদি তিনি জানেন ভেষজগুলোতে অর্থাৎ প্রত্যেকটি ভেষজের ভিতরে কি আরোগ্যশক্তি নিহিত আছে ( ভেষজশক্তি সম্বন্ধে জ্ঞান), যদি তিনি জ্ঞাত থাকেন- রোগীর ভিতরে যা পীড়া বলে নিঃসন্দেহে জানা গেছে তার উপর কেমন করে স্পষ্ট ধারণাযুক্ত নীতি অনুসারে ভেষজের আরোগ্যশক্তিকে প্রয়োগ করতে হয়- যার ফলে আরোগ্যকার্য শুরু হবে এবং ভেষজটির ক্রিয়াপ্রণালী অনুসারে রোগীর উপর প্রয়োগের যোগ্যতা সম্বন্ধে তা সুনির্বাচিত কিনা (ওষুধ নির্বাচন); এবং তা ছাড়া ইহা প্রস্তুত করার ঠিক পদ্ধতি কি পরিমাণে প্রয়োজন (মাত্রা) এবং পুনঃপ্রয়োগ করার উপযুক্ত সময় এবং পরিশেষে প্রত্যেকটি আরোগ্যের ক্ষেত্রে কি বাধা ও তা কি উপায়ে দূরীভূত করা হয় তাতে আরোগ্যবিধান স্থায়ী হতে পারে- চিকিৎসকের এ সব যদি জানা থাকে তা হলে সুবিজ্ঞতা ও বিচারবুদ্ধিসম্মতভাবে কি প্রকারে চিকিৎসা করা যায় তখন তাঁর বোধগম্য হবে এবং তিনি তখন আরোগ্য-নৈপুণ্যে প্রকৃত চিকিৎসক।
x

সূত্রঃ ৪। প্রকৃত স্বাস্থ্য সংরক্ষক চিকিৎসক-

যে সকল কারণ স্বাস্থ্যের বিশৃঙ্খলা আনয়ন করে এবং পীড়ার উৎপত্তি ঘটায়, স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিগণের নিকট হইতে সেগুলিকে কেমন করিয়া দূরে রাখা যায়, এ সব তথ্য তাঁহার ( চিকিৎসকের) জানা থাকিলে তিনি স্বাস্থ্যসংরক্ষকও বটে।
x

সূত্রঃ ৫। রোগারোগ্যের জন্য চিকিৎসকের রোগের কারণ সম্পর্কিত জ্ঞান-

রোগ আরোগ্য করিবার সহায়তার জন্য চিকিৎসকের জানা প্রয়োজন- অচির রোগোৎপত্তির পক্ষে অতি সম্ভাব্য উদ্দীপক কারণ ( exciting cause) এবং চিররোগের সমগ্র ইতিহাসে বিশেষ বিশেষ জ্ঞাতব্য বিষয়গুলি বাহির করিতে হইবে। ঐ সমস্ত প্রধান কারণগুলি চিররোগের উৎপাদিকা শক্তি। এইসব বিষয়ে অনুসন্ধান করিবার জন্য রোগীর শারিরীক গঠন, তাহার মানসিক ও চরিত্রগত বিশেষত্বসমূহ, রোগীর জীবিকা, তাহার বাসস্থান, বেশভূষ্য, সামাজিক ও গার্হস্থ্য তথ্য, দাম্পত্য ক্রিয়া প্রভৃতি সমস্ত বিষয় বিবেচনা করিতে হইবে।
x

সূত্রঃ ৬। রোগের প্রকৃত পরিচয় ও উহার পর্যবেক্ষণ-

যেইসব মতবাদ অতীন্দ্রিয় সেইসব মতবাদ চাক্ষুষ প্রমাণ করা যায় না বলিয়া কুসংস্কারবিহীন দর্শক তাঁহার সূক্ষদর্শিতা যত প্রখর হোক না কেন, প্রত্যেক রোগে রোগীর মনে ও দেহের কি বাহ্যিক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে তাহা ছাড়া আর কিছুই লক্ষ্য করেন না,অর্থাৎ সুস্থাবস্থায় লোকটির কি প্রকার অবস্হা ছিল, এখন রোগ হওয়ার পর কি কি অস্বাভাবিক অবস্হা রোগী অনুভব করিতেছে এবং সেবা শূশ্রুষাকারীরা কি কি উপলব্ধি করিতেছেন ও চিকিৎসক কি কি উপলব্ধি করিতেছেন তাহাই তিনি লক্ষ্য করেন। তাই দেখা যাইতেছে যে এই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য লক্ষণগুলিই সম্পূর্ণ রোগ প্রকাশ করিয়া থাকে। এই লক্ষণগুলি দ্বারাই রোগের আকৃতি অংকন করা যায়।
x

সূত্রঃ ৭। লক্ষণসমষ্টিই উপযুক্ত ঔষধ নির্বাচনের একমাত্র নির্দেশিকা-

কোন রোগের ক্ষেত্র হইতে উদ্দীপক বা পরিপোষক কারণ যখন দূরীভূত করিতে হইবে না তখন পীড়ার লক্ষণ ছাড়া আর কিছু আমরা ধারণা করিতে পারি না। রোগনিরাময় করিবার জন্য যে ঔষধ প্রয়োজন তাহাকে নির্দেশ করিবে একমাত্র সেইসব লক্ষণাবলী (কোন রোগবীজ বা মায়াজম আছে কিনা এবং তার আনুষঙ্গিক অবস্হা সম্বন্ধে অবহিত হইয়া- ৫ম সূত্র)। বিশেষ করিয়া এইসব লক্ষণের সমষ্টিই হইল আভ্যন্তরীণ মূল রোগের অর্থাৎ পীড়িত জীবনীশক্তির বাহিরের প্রতিচ্ছবি এবং এইগুলিই হইবে একমাত্র অবলম্বন যাহার দ্বারা সুনির্বাচিত ঔষধ নির্ণীত হইবে। মোটকথা লক্ষণসমষ্টিই হইবে প্রধান, বস্তুত ইহাই একমাত্র জ্ঞাতব্য বিষয় যাহার সাহায্য চিকিৎসক তাঁহার চিকিৎসানৈপুণ্যে রোগীকে নিরাময় করিয়া স্বাস্হ্যে ফিরাইয়া আনিতে পারেন।
x

সূত্রঃ ৮। লক্ষণসমষ্টির অবসানই আরোগ্য প্রাপ্তি-

ইহা ধারণাতীত কিংবা পৃথিবীর কোন অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রমাণিত হয় না যে ব্যাধির সমস্ত লক্ষণ এবং বোধগম্য সমগ্র বিষয় তিরোহিত হইলে স্বাস্থ্য ছাড়া আর কিছু থাকিতে পারে বা থাকা উচিত, অথবা পীড়ার আভ্যন্তরীণ বিকৃতি নির্মূল না হইয়া থাকিতে পারে।
x

সূত্র- ৯। জীবনশক্তির প্রভাবে মানবদেহ সজীব থাকে-

মানুষের সুস্হাবস্হায় অতীন্দ্রিয় জীবনীশক্তি ( অট্যোক্র্যাসি)- যাহাকে ডাইনামিস বলা হয় এবং যাহা এই জড়দেহকে সঞ্জীবিত রাখে- অসীম ক্ষমতায় নিজের কর্তৃত্ব প্রকাশ করে এবং বোধশক্তি ও কার্যকারিতার দিক দিয়া দেহের সকল অবয়বকে অত্যুত্তমরূপে ও সুসামঞ্জস্যভাবে বজায় রাখে, যাহার ফলে আমাদের অন্তঃস্থিত বিবেকসম্পন্ন মন এই জীবন্ত সুস্হ দেহকে জীবনের উচ্চতর উদ্দেশ্য সাধনের জন্য স্বাধীনভাবে নিয়োগ করিতে পারে।
x

সূত্রঃ ১০। জীবনীশক্তি একটি অভৌতিক সত্ত্বা-

জীবনীশক্তিকে বাদ দিয়া জড়দেহের অনুভব করিবার, কার্য সম্পাদন করিবার, আত্মরক্ষা করিবার কোন সামর্থ্য নাই। সমস্ত অনুভবশক্তি দেহ পায় এবং জীবনধারণ ব্যাপার সম্বন্ধীয় সমস্ত কার্য দেহ নিষ্পন্ন করে, কেবল এই অশরীরী সত্তার (প্রাণধারণনীতি) সাহায্যে, এবং ইহা স্বাস্হ্য ও ব্যাধিতে এই জড়দেহকে সঞ্জীবিত রাখে।
x

সূত্রঃ ১১। রোগ বা জীবনীশক্তির আক্রান্ত অবস্হা-

যখন কোন ব্যক্তি পীড়িত হয় তখন কেবলমাত্র অশরীরী স্বয়ংক্রিয় জীবনীশক্তিই কোন প্রাণবিরোধী পীড়াদায়ক উপাদানের সূক্ষ্ম প্রভাবদ্বারা বিশৃঙ্খলাপ্রাপ্ত হয়। এই প্রাণধারণনীতিই এইরূপ অস্বাভাবিকভাবে বিশৃঙ্খলিতা হইলে দেহের ভিতরে অপ্রীতিকর অনুভূতিসমূহ আসিয়া উপস্হিত হয় এবং দেহকে অস্বাভাবিক গতিপথে পরিচালিত করে ইহাকেই আমরা বলি ব্যাধি। যেহেতু এই শক্তিকে দেখা যায় না এবং কেবল দেহের উপর ক্রিয়া প্রকাশ দ্বারা ইহাকে চিনিতে পারা যায়, সেইজন্য ইহার পীড়াদায়ক বিশৃঙ্খলা ব্যাধিরূপে জানিতে পারা যায় কেবলমাত্র সেই সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অনুভূতি ও ক্রিয়ার ভিতর দিয়া যেগুলি পর্যবেক্ষক ও চিকিৎসকের ইন্দ্রিয়গোচরে আসে অর্থাৎ তাহা গোচারীভূত হয় রোগের লক্ষণ দ্বারা অন্য কোন প্রকারেই নহে।
x

সূত্রঃ ১২। আক্রান্ত জীবনীশক্তি এক সাথেই বিশৃঙ্খল হয় আবার রোগ-লক্ষণ বিদূরিত হইলে এককালেই স্বাস্থ্য পুনঃস্থাপিত হয়-

কেবলমাত্র অসুস্থ জীবনীশক্তি ব্যাধি উৎপন্ন করতে পারে যাহার ফলে আমার দৃষ্টির বিষয়ীভূত রোগচিত্রে তৎক্ষণাৎ প্রতিফলিত হয় অন্তর্নিহিত সমগ্র পরিবর্তন অর্থাৎ সেই প্রকাশ হইল আভ্যন্তরীণ জীবনীশক্তির সমগ্র ব্যাধিবিশৃঙ্খলা; এক কথায় তাহাই হইল সমগ্র ব্যাধির অভিব্যক্তি। আর, চিকিৎসার ফলে দৃষ্টিগম্য রোগচিত্রের এবং সূস্হ প্রাণক্রিয়া হইতে পৃথক সকল অসুস্হকর পরিবর্তনের অন্তর্ধান নিশ্চয়ই সূচিত করে জীবনীশক্তির অখন্ড সত্তার পুনরুদ্ধার, অতএব সমগ্র দেহের ফিরিয়া পাওয়া স্বাস্হ্য।
x

সূত্রঃ ১৩। কোন রোগই দেহ হইতে পৃথক বস্তু নহে-

অতএব ব্যাধি সম্বন্ধে (যাহা সার্জারির অন্তর্ভুক্ত নহে) অ্যালোপ্যাথগণের এই যে ধারণা অর্থাৎ সমগ্র জীবনসত্তা এবং দেহ ও তার সঞ্জীবনী প্রাণশক্তি হইতে ব্যাধি পৃথক এবং তাহা যতই তীব্র প্রকৃতির হউক না কেন দেহাভ্যন্তরে লুক্কায়িত থাকা- তাহা সম্পূর্ণ অসঙ্গত এবং কেবল জড়ধর্মী মনই তাহা কল্পনা করিতে পারে। এই ধারণা হাজার হাজার বৎসর ধরিয়া প্রচলিত চিকিৎসা- পদ্ধতিকে এই সকল ক্ষতিকর প্রেরণা যোগাইয়া আসিতেছে যাহার ফলে এই চিকিৎসা একটি যথার্থ অনিষ্টসাধক (অনারোগ্যকারী) বৃত্তিতে পরিণত হইয়াছে।
x

সূত্রঃ ১৪। দেহাভ্যন্তরে রোগের অবস্থিতি চিকিৎসকের নিকট ধরা পড়িবেই-

মানুষের দেহাভ্যন্তরে আরোগ্যযোগ্য এমন কোনো অসুস্থতা এবং অদৃশ্য বিশৃঙ্খলা থাকিতে পারে না যাহা যথার্থ পর্যবেক্ষণশীল চিকিৎসকের নিকটে পীড়াসূচক লক্ষণাদির দ্বারা ধরা না পড়ে। এইযে ব্যবস্থা তাহা সর্বজ্ঞানাধার লোকপালক পরমেশ্বরের অসীম করুণারই সম্পূর্ণ অভিপ্রেত ।
x

সূত্রঃ ১৫ । জীবনীশক্তির অসুস্থতা এবং প্রকাশিত লক্ষণসমষ্টি অভিন্ন-

যে অতীন্দ্রিয় জীবনীশক্তি অদৃশ্য দেহাভ্যন্তরে অবস্থিত থাকিয়া আমাদের দেহকে সঞ্জীবিত রাখে তাহার বিশৃঙ্খলা অবস্থাহেতু পীড়া এবং তাহার দ্বারা সৃষ্ট বাহিরে বোধগম্য লক্ষণসমষ্টি যাহাকে বর্তমান অসুস্থতার প্রতিরূপ বলা যায় তাহাদের উভয়ের সত্তা অখন্ড এবং তাহারা সেই একই বস্তু। বস্তুত প্রাণ প্রিয়া প্রকাশের যন্ত্র হইল এই জড় দেহ, কিন্তু স্বতঃস্ফূর্ত অনুভূতিশীল ও নিয়ামত জীবনীশক্তি ধারায় ইহাতে সজীবতার ব্যতিরেকে ইহার কোন সার্থকতা নাই, ঠিক যেমন দেহযন্ত্র ব্যতীত জীবনীশক্তিকে কল্পনা করা যায় না । অতএব একত্র মিলিয়া এক অখণ্ড সত্তা, যদিও সহজে বুঝিবার জন্য আমাদের মন কল্পনার সাহায্যে এই একাত্মতাকে দুইটি ধারণায় পৃথক করিয়া দেখে ।
x

সূত্রঃ ১৬ । সূক্ষ্ম রোগশক্তি দ্বারা আক্রান্ত সূক্ষ্ম জীবনীশক্তি সূক্ষ্ম ঔষধশক্তি দ্বারাই আরোগ্যপ্রাপ্ত হয়-

আমাদের জীবনীশক্তি সুক্ষ্মধর্মী বলিয়া অতীন্দ্রিয় সূক্ষ্মশক্তির ক্রিয়া ব্যতিরেকে প্রাণক্রিয়ার শৃঙ্খলাভঙ্গকারি বাহিরের বিরুদ্ধশক্তি কর্তৃক আনীত সুস্থ দেহের উপর কোন অনিষ্টকর প্রভাবের দ্বারা তাহা আক্রান্ত বা প্রভাবান্বিত হইতে পারেনা । ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের অতিন্দ্রীয় জীবনে শক্তির উপর ক্রিয়াশীল ভেষজের পরিবর্তনকারী অতিন্দ্রীয় শক্তির ( সূক্ষ্ম ফলোৎপাদক শক্তিসম্পন্ন) প্রভাব ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে ইহার সকল বিকৃতি ( ব্যাধি) দূর করা চিকিৎসকের পক্ষে সম্ভব নয়। দেহের সর্বত্র অবস্থিত অনুভূতিমূলক স্নায়ুমণ্ডলীর সাহায্যে জীবনীশক্তি ভেষজের প্রভাবে সারা দেয়। সুতরাং মনোযোগের সহিত পর্যবেক্ষণশীল ও অনুসন্ধিৎসু চিকিৎসকের নিকটে আরোগ্যবিধানের পক্ষে যতখানি প্রয়োজন ততখানি বিশদভাবে রোগীর স্বাস্থ্যের বোধগম্য পরিবর্তনসমূহ (লক্ষণসমষ্টি) ব্যাধিরূপে ধরা দিলে তাঁহার ব্যবস্হিত ঔষধসমূহের সূক্ষ্ম প্রভাব জীবনীশক্তির উপর প্রতিফলিত হইয়া স্বাস্থ্য ও সাবলীল প্রাণক্রিয়াকে পুনরায় আনয়ন করিতে সমর্থ হয় এবং তাহা কার্যত সম্পন্ন করিয়া থাকে।